fenirshomoy logo black

আরিফ আজম:

পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের নিজকালিকাপুর গ্রাম। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তঘেঁষা বল্লামুখা বাঁধ। গত বছরের আগস্টে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাঁধটি কেটে দেয়ায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত হয় ফেনীসহ আশপাশের এলাকা।

আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ মেরামত কাজ শুরু হলেও শেষের আগেই ধ্বসে পড়ছে। কালবৈশাখীর প্রথম বৃষ্টিতে বাঁধের একটি অংশে মাটি ধ্বসে গেছে। একদিকে বালি মালি ব্যবহার ও আরেকদিকে বাঁধের ঢালের মাটি কেটে গভীর খাদের সৃষ্টি করায় এ ভাঙন দেখা দিয়েছে। এভাবে সংস্কার করায় বৃষ্টি পুরোদমে শুরু হলে পানির তোড়ে বাঁধটি টিকবে কিনা এনিয়ে আশংকা করছেন স্থানীয়রা। সরেজমিনে ঘুরে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বল্লামুখায় জিরোপয়েন্ট এলাকায় বাঁধের ৭০মিটার পর্যন্ত ব্লক স্থাপন, নদীর পাড়ের ৬০মিটার এলাকায় ব্লক স্থাপন এবং ৬৮০ মিটার বাঁধ সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভিষন ২০২০ ও এসএ নামের একটি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ কাজ করছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের রক্ষনাবেক্ষন খাত থেকে ৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয় র্নিধারণ করা হয়। নিজ কালিকাপুর এলাকায় ইউনাইটেড ব্রাদার্স নামে আরেকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪৫০ মিটার বাঁধ সংস্কার কাজ বাস্তবায়ন করছে। এছাড়া অলকা গ্রামে ৩ কোটি ১০ লাখ ৬৩ হাজার টাকা ব্যয়ে ৪৬০ মিটার বাঁধ মেরামত এবং তুলাতলী এলাকায় ১ কোটি ৩৩ লাখ ৪২ হাজার টাকা ব্যয়ে ৯২ মিটার বাঁধ মেরামত কাজ চলমান রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাঁধ নির্মাণে অন্য এলাকা থেকে কিছু মাটি আনা হলেও বেশিরভাগ মাটি এস্কেভেটর দিয়ে বাঁধের পাশের জমি থেকেই তোলা হয়েছে। এর বেশিরভাগ বালি মাটি। গত সপ্তাহে প্রথম বৃষ্টিতেই বাঁধের একটি অংশে বাঁধের মাটিতে ধ্বস দেখা দিয়েছে। পুরোদমে বর্ষা শুরু হলে নদীর পানির তোড়ে বাঁধ ধ্বসে পড়তে পারে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো: আবুল কাশেম বলেন, বর্ষার আগেই কাজ শেষ করতে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বন্যার পর পরিচালন রক্ষনাবেক্ষণ খাত থেকে পরশুরাম-ফুলগাজীতে ৯ কোটি ৬৮ লাখ ১৪ হাজার টাকা ব্যয়ে ৯৬টি বেড়িবাঁধ মেরামত করা হয়েছে। ১৫ ফুট উঁচু এবং ১৪ ফুট প্রস্তের সংস্কারাধীন এ বাঁধের ঢালু হবে ৪২ ফুট। বাঁধের স্থায়িত্ব বাড়াতে এক পাশে জিও ব্যাগ দিয়ে ঢালু ভরাট হবে অন্যপাশে লাগানো হবে বিশেষ ধরণের ঘাস।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের দৈর্ঘ্য ১২২ কিলোমিটার। গতবারের বন্যায় নদী তীরের ১০২টি স্থানে ভেঙ্গে যায়। এর মধ্যে সাড়ে ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯৬টি ভাঙ্গা অংশের মেরামত কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনী জেলাকে বন্যার ভয়াবহতা থেকে বাঁচাতে মুহুরী-কহুয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি নিষ্কাশন ও সেচ ব্যবস্থা পুনর্বাসনে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবনা গ্রহণ করে মেগাপ্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে নদী তীর প্রতিরক্ষার কাজ, নদী পুন:খনন, বিদ্যমান বাঁধ পূন:নির্মাণ, নতুন বাঁধ নির্মাণ, বাঁধের ঢাল ও পাদদেশে প্রতিরক্ষা কাজ, বন্যা বাইপাস ও ফিউজ, রেগুলেটর ও ড্যাম নির্মাণ, জলাধার পূন:খনন, বিদ্যমান অবকাঠামো পূনর্বাসন, বিদ্যুৎ খুটি অপসারন, ব্রিজ অপসারন ও নতুন নির্মাণ প্রকল্প রয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!