এডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী মোর্শেদ :
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীন বিএনপি কোন জাতীয় নির্বাচন, উপনির্বাচন, কুমিল্লা সিটি নির্বাচন সহ কোন নির্বাচনেই অংশ নেয় নাই কারন স্বরুপ বিএনপির বক্তব্য তারা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্তাবধায়ক সরকারের অধীন তথা নির্বচানকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবীতে যে আন্দোলন করছে তারই ধারা বাহিকতায় ক্ষমতাসীন সরকারের অধীন তারা কোন নির্বাচনে অংশ নিবেনা। এজন্যই তারা এ নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোন নির্বাচনে অংশ নেন নাই। এ ছাড়াও এ সরকারের অধীন বিগত দিনে বিএনপি যত গুলো জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছে সব গুলোতে আওয়ামীলীগ সরকারের কারচুপি, ইভিএম এর গোপন ব্যলট কক্ষে মাস্তান ঢুকে জোর পূর্বক সিলমারা, পুরোদেশে জনগনের নিকট প্রমানিত হওয়ায় জন আকাঙ্কা অনুযায়ী বিএনপি নির্বাচন বর্জন করছে সুষ্ঠ নির্বাচনের দাবীতে নির্বাচন কালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনের জন্য সরকারকে বাধ্য করার দাবিতে বিএনপি ক্রমাগত আন্দোলন করে বিএনপি এই দাবির সাথে দ্বিমত করার খুব বেশি সুযোগ নেই।
কেননা ২০১৮ সালের নির্বাচন বিএনপি চরম ভাবে প্রতারিত হয়েছে বলে তাদের বিশ্বাস এবং পরবর্তীতে অন্যান্য নির্বাচনে ও বিএনপি প্রতারিত হয়েছে বলে দেশের জনসাধারনের একটা অংশ বিশ্বাস করে তাই অনেকে বিএনপির এই নির্বাচন বর্জনকে সমর্থন করেন এবং বিএনপির পথ ধরে অনেক খ্যাতিমান বামপন্থি রাজনৈতিক দলও নির্বাচন বর্জন করেছেন তারা ও বিএনপির সাথে নির্বাচন কালিন নিরপ্ক্ষ সরকারের দাবিতে রাজ পথে আন্দোলন করছে। ২০১৮ সালের পর থেকে বিএনপি নরমেগরমে নির্বাচন কালিন সরকারের জন্য আন্দোলন করে আসছে। ব্যাপক জনগোষ্ঠিকে নির্বাচন কালিন সরকারের জন্য বিএনপি রাজপথে নামাতে না পারলেও সচেষ্ঠ ছিল তবে ২০২২ সালে বিভাগীয় শহর গুলোতে বড় বড় সমাবেশ করেছে এবং সরকার সমাবেশ গুলোকে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায় মানুষ প্রতিটি জন সভায় তিন চার দিন মাঠে ছিল এবং সর্বশেষ ১০ই ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি যে ঐতিহাসিক গনজাগরন সৃষ্টি করেছিল তাতে দেশব্যাপি মানুষের ভিতর ধারনা জন্মেছে বিএনপি ক্ষমতায় আসছেই ১০ই ডিসেম্বর পর বিএনপির আন্দোলন কর্মসুচিগুলো যেন উত্তাল গন আন্দোলন থেকে হঠাৎ নিরোত্তাপ কর্মসুচিতে চলে গেল। সাধারন মানুষ বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের এ কর্মসুচি দেখে তাদের দুরদৃষ্টি নিয়ে মানুষের মনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
১০ই ডিসেম্বর ২০২২ তারিখ বিএনপি যে আশা জাগা নিয়ে ঢাকা সভা করেছিলেন এবং যে বিশাল ত্যাগ স্বীকার করে সাধারন মানুষ ও বিএনপির তৃনমুল নেতাকর্মী রাজপথে নেমে এসেছিল সে চেতনা বিএনপি নেতৃত্ব ধারন করতে পেরেছে কিনা তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন আছে। তার উপর বিশাল জনসভায় সরকার বিরোধী বৃহত কোন কর্মসুচী না দিয়ে চমক হিসাবে বিএনপি দলীয় ৭ জন সাংসদের সংসদ থেকে পদত্যাগ ঘোষনা দেন। অথচ বিএনপি দলীয় এমপি ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহানা ও হারুনুর রশিদ জনদাবী তুলে ধরার জন্য সংসদে জাতীয় মুখ পাত্র হিসাবে পরিচিতি পেয়েছিলেন। এতে লাভ কি হল বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বই জানে। এ বিষয়ে আলোচনা করলে বিএনপির নেতৃত্ব জানান- কেন্দ্র যা ভালো বুজেছে তাই করেছে। আপনাদের থেকে কেন্দ্র কম বুঝে না। হয়ত তাদের কথাই ঠিক।
বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বিতের সিদ্ধান্ত গ্রহন প্রক্ষিয়া নিয়ে নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি মান্না বলেছেন- ‘জনগন পাকিস্তানের ইমরান খানকে আন্দোলন করে সেনা বাহিনী ও কারাগার থেকে বের করে আনেন, আর বিএনর্পি নেতাকর্মীরা মিছিল করে শোডাউনের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে দিয়ে এসেছে ” বিএন পির দলীয় সাংসদেরা সংসদ থেকে পদত্যাগ করে সরকারকে কোন চাপে ফেলতে পেরেছে এমন কিছু দৃশ্যমান হয় নাই বরং ব্রাক্ষণবাড়ীয়ার এমপি উকিল আবদুল সত্তার সরকারের যোগ সাজেশে পুনরায় সাংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিএনপিই চাপে পড়ে ছিল। সে যাক বিএনপির নেতৃত্বের সমালোচনা করা আমার কাজ নয়। তবে রাজনিতি বিজ্ঞানের ছাত্র হিসাবে দেশের স্বার্থে ্এবং গনতন্ত্রের স্বার্থে রাজনৈতিক কিছু বিষয় বিশ্লেষন করে সিদ্ধান্ত গ্রহন প্রক্রিয়ায় বিবেচনার জন্য কিছু বিষয় তুলে ধরা।
প্রিয় পাঠক আমরা সবাই কমবেশি জানি- সাংবিধানিক ভাবে ত্বত্তাবধায়ক সরকার গঠন করা আর সম্ভব নয় বিএনপির যৌকৎিক দাবী নির্বাচনকালীন নিরপ্ক্ষে সরকারের অধীনে নির্বাচন সরকারের বিভিন্ন কৌশল বিএনপির আন্দোলনকে চুড়ান্ত পরিনতি দিচ্ছেনা, বিএনপির কোন নেতা কর্মী ইমরান খানের সমর্থকদের মত জান বাজি আন্দোলন করতে পারছেনা আন্দোলন করলেও সরকার কোন আন্দোলনের সুযোগ দিচ্ছে না। অথচ বিএনপি বিগত ১৬ বছর যাবত ক্ষমতার বাহিরে এমনি তর অবস্থায় দেশে ৫টি সিটি করপোরেশানের তফছিল ঘোষনা করেছে নির্বাচন কমিশন, বিএনপির জনপ্রিয় স্থানীয় নেতা সিলেটের মেয়র আরিফ, রাজশাহীর মিনু বুলবুল, গাজীপুরের হাসান সরকার খুলনার মনা, বরিশালের মুজিব এদেরকে নির্বাচন করতে না দিয়ে বিএনপি বুঝাতে চেয়েছে বিএনপি ছাড়া সরকার নির্বাচন করতে পারবেনা, সরকারের কারচুপি তুলে ধরার জন্য বিএনপির সমর্থক কাউকে কাউন্সির পদে দাড়াতে নিষেধ করলো এবং যারা দাঁড়ালো তাদেরকে স্থায়ীভাবে দল থেকে বহিস্কার করলো, কিন্তু সরকার নিলো ভিন্ন কৌশল নৌকা প্রতিকে দলীয় প্রার্থীকে নমিনেশন দিলো এবং স্বতন্ত্র হিসাবে আরেক আওয়ামীলীগারকে দাঁড় করিয়ে দিল, দেশীয় ভাষায় যাকে বলে, ”ছাফ ভাগ করে খেলা”। প্রিয় পাঠক, আপনারাএকটু খেয়াল করলে দেখবেন গাজীপুরের সিটি করপোরেশানের নির্বাচনে নৌকা প্রতিকে নির্বাচন করলেন এডভোকেট আজমত উল্ল্যাহ তার বিপরীতে স্বতন্ত্র নির্বাচন করলেন গত নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম এবং আরেক প্রার্থী তার মা। ঋণ খেলাপের দায়ে জাহাঙ্গীর আলমের প্রার্থীতা বাতিল হলে তার মা জাহেদা বেগম মুল প্রতিযোগীতায় চলে আসে। নির্বাচনে জায়েদা পান ২লক্ষ ৩৮ হাজার ভোট আর নৌকায় পান ২লক্ষ ২২হাজার ভোট । নির্বাচনের ফলাফল ঘোষনার পরই জাহাঙ্গীর আলম এবং জায়েদা বেগম ঘোষনা করেন গাজীপুরে নৌকা হারেনি হেরেছে ব্যাক্তি কারন তারা নিজেরাই নৌকার লোক এই বক্তব্যর পর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, গাজীপুরে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী পরাজিত হলেও সুষ্ঠ নির্বাচনের কারনে জয় হয়েছে গনতন্ত্রের এবং সুষ্ঠ নির্বাচনের কারনে জয় হয়েছে। শেখ হাসিনার দেশব্যাপি গাজীপুরের নির্বাচন প্রমান করেছে এই সরকারের অধীন সুষ্ঠ নির্বাচন করা সম্ভব। মজার বিষয় হল- আওয়ামীলীগ যখন নিশ্চিত হয়েছে পাঁচ সিটি নির্বাচনে বিএনপি নির্বাচন করবে না তখন সচেতন ভাবে বিএনপিকে নির্বাচন থেকে বাহিরে রেখে নিজ দলীয় প্রার্থীদের মধ্যে দৃশ্যৃত সুষ্ঠ ভোট আয়োজন করেছেন যার জন্য বিএনপি থেকে বহিস্কৃত ১১জন নেতা কর্মী ¯’ানীয় ভাবে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন।
এখন চিন্তার বিষয় হল- এই জাতীয় নির্বাচনের আগে বিএনপি যেভাব্ েআওয়ামীলীগকে ৫সিটিতে ওয়াক ওভার দিয়েছে বিএনপি বিহীন নির্বাচনে শতভাগ শান্তিপূর্ন সুষ্ঠ নির্বাচন করলে জনমনে ২০১৮ সালে নির্বাচনে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে তা কি আর থাকবে অথচ বিএনপি যদি ৫ সিটিতে নির্বাচন করতো সরকারের জনপ্রিয়তা দেখানোর জন্য হলে ও সরকার তার চেনা রুপে হাজির হত, না হলে বিএনপি জয় লাভ করত। বিএনপি যদি পরাজিত হতো কারচুপি কারনে তাহলেও বিএনপিই লাভবান হত কিন্তু বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ না নিয়ে একদিকে যেমন শক্তি হীন করছে অন্য দিকে আওয়ামীলীগকে ওয়াক ওভার দিয়ে নিজ দলীয় প্রার্থীদের মধ্যে সুষ্ঠ নির্বাচন করে বিশ্ব ব্যাপি আওয়ামীলীগের গ্রহন যোগ্যতা বাড়ার সুযোগ করে দিয়েছে।
গত ১৭ তারিখ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য নতুন ভিসা নিতি ঘোষনা করেছেন এতে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশে সুষ্ঠ নির্বাচনে যে বা যারা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টির আদেশ দিবেন এবং যারা আদেশ পালন করবেন, যারা শান্তিপূর্ন সভা সমাবেশে বাধা দিবেন এবং সুষ্ঠ নির্বাচনে বাধা দিবেন তাদেরকে এবং তাদের পৌষ্যদেরকে মার্কিন ভিসা দেওয়া হবে না। মার্কিন ভিসা নিয়ে সাধারন মানুষের তেমন কোন কিছু যায় আসেনা। কিন্তু বর্তমান ক্ষমাতাসীন দল ও নিকট অতীতের ক্ষমতাসীন দলের টাকা ওয়াল নেতাদের এবং যাদের পরিবার পরিজন আমেরিকা আছেন ও থাকবেন এবং যাদের বাড়িঘর ব্যবসা বানিজ্য আমেরিকাতে আছে তাদের জন্য এটি ভয়ংকর বিপদ সরকারের ইচ্ছা থাকুক বা না থাকুক বাকি ৪টি সিটি করপোরেশানের নির্বাচন নিশ্চিত সুষ্ঠ করতে সরকার বাধ্য অথচ রাজনীতির পট পরির্বতনের এই সুযোগ বিএনপির নেতা কর্মীরা পাচেছ না। রাজনীতিতে সিদ্ধহস্ত আওয়ামীলীগ-বিএনপির নির্বাচন বর্জনের ডাককে গনতন্ত্র বিরোধী ও সুষ্ঠ নির্বাচনের অন্তরায় বলে সরকার ব্যপক প্রচার দিয়ে বিএনপির নির্বাচন কালীন সরকারের দাবীকে ম্লান করে দিবে এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দল গুলো থেকে প্রতিনিধি নিয়ে সর্ব দলীয় আঙ্গিকে সরকার গঠন করে কৌশলে বিএনপিবিহীন একটা দৃশ্যত সুষ্ঠ নির্বাচন আয়োজন করে আওয়ামীলীগ পরবর্তী বৈধ সরকার গঠন করবে।
তাহালে বিএনপির করনীয় কি? আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে ৭৫ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আওয়ামীলীগকে অনেক চরাই উৎরাই পার হতে হয়েছে। টানা ২১ বছর তারা ক্ষমতার বাহিরে ছিল, স্বাধীনতা আনায়ন কারী দল হিসাবে নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ২৯টি আসনও পেয়েছিল কিন্তু কখনো আওয়ামীলীগ চুড়ান্তভাবে ভোট বর্জন করে নাই। নির্যাতন, জেল জুলুম ও যে কম সহে ছিল তাও না কিন্তু আওয়ামীলীগ কোন সরকারকে কোন নির্বাচনে ওয়াক ওভার দেয় নাই, বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল বিএনপি কেন আওয়ামীলীগকে এ দারুন উত্তেজনাকর মুহুত্বে ওয়াকওভার দিবে ? আওয়ামীলীগ সরকার যখন ঘরে-বাহিরে সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য চাপে রয়েছে তখন নির্বাচনী প্রতিযোগীতা থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করার বিএনপির এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যত ইতিহাস মুল্যায়ন করবে। তবে আমি মনে করি এই মুহুত্বে দেশের মর্যদা রক্ষাকরার জন্যে মার্কিনীরা যে ভিসা নীতি ঘোষনা করেছে বাংলাদেশের জন্য, সে বিষয়ে করনীয় নির্ধারনে সরকারের উচিত জাতীয় সংলাপ আহবান করা বিএনপির উচিত হবে জাতীয় স্বার্থে সংলাপে অংশ নিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠ, গ্রহনযোগ্য, অবাধ, নিরপেক্ষ করার জন্য ইতিপূর্বে ওবায়দুল কাদেরের প্রস্তবিত সর্বদলীয় সরকারে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের গনতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে নির্বাচনে অংশ নেওয়া শুধু আমেরিকা নয় বিশ্বকে দেখিয়ে দেওয়া উচিত হবে যে জাতি যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে সে জাতির অপমানে আমরা জাতীয় স্বার্থে জাতীয় ঐক্যমতে পৌছাতে পারি । তবেই দেশে শান্তি নিরাপত্তা ও গনতন্ত্র সুসংহত হবে। এক্ষেতে সরকারের দায়িত্ব একটু বেশী সরকারকেই দায়িত্ব নিয়ে জাতীয় সংলাপ ডাকতে হবে, বিএনপি সহ সকল স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি কোন শর্ত ছাড়া সংলাপে অংশ নিয়ে গনতন্ত্রকে এগিয়ে নিবে।
লেখক : সাধারন সম্পাদক, ভাসানী স্মৃতি সংসদ ফেনী
আজীবন সদস্য, ঢাবি রাষ্ট্রবিজ্ঞান এলামনাই এসোসিয়েশন
সভাপতি, গর্ভারনেন্স এসোসিয়েশান, ফেনী।