দৈনিক ফেনীর সময়

খৈয়াছড়ায় কমে গেছে পর্যটক

খৈয়াছড়ায় কমে গেছে পর্যটক

এম মাঈন উদ্দিন :

চিরচেনা খৈয়াছড়া ঝরনা সড়কে পর্যটকদের আগের সেই জটলা নেই। নেই আগের কোলাহল। রাস্তা অনেকটা ফাঁকা। মাঝে মধ্যে কিছু মাইক্রো, সিএনজি পর্যটক নিয়ে ঝরনার দিকে যাচ্ছেন। কেউবা ঝর্না থেকে ফিরে আসছেন। শুক্রবার ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার পর আজ ঝরনায় যাওয়া পর্যটক কমে গেছে বলে জানান এই সড়কে সিএনজি অটোরিক্সা চালক মো. সেলিম। সেলিম বলেন, প্রতিদিন এসময়ে অনেক গাড়ি ঝরনার দিকে যায়। সড়কে গাড়ির চাপ থাকে। আজ সকাল থেকে গাড়ি আগের তুলনায় কমে গেছে। হয়তো মানুষের মধ্যে ভয় ঢুকে গেছে।

শনিবার দুপুর ১টার দিকে লেভেল ক্রসিংয়ে দেখা গেছে, রেল লাইনে গাড়ি উঠার আগে এক, দুই মিনিট অপেক্ষা করছে। অনেকটা ভয়ে ভয়ে পার হচ্ছেন গাড়ি। কিছু গাড়ি রেল লাইনের পাশে এসে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে, গেটকিপার ইশারা দিলে পার হচ্ছে।

ঝর্না থেকে ফেরার পথে কথা হয় কুমিল্লা থেকে আসা একদল পর্যটকের সাথে। তারা বলেন, গতকালকের দুর্ঘটনার কথা শুনেছি। কিন্তু আমাদের প্রোগ্রামের সিডিউল আগে করা ছিলো। তাই ঝরনায় গিয়েছিলাম। তবে মনের মধ্যে কিছুটা হলেও ভয় কাজ করছে।

ওখানকার স্থানীয় ব্যবসায়ী ভোলা মেস্ত্রী বলেন, এভাবে যদি কালকে একটু খেয়াল করে রেল লাইন পার হতেন তাহলে এতো বড় মর্মান্তিক ঘটনা ঘটতো না। এছাড়া ওই সময় গেটকিপার ঘটনাস্থলে ছিলো না বলে জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, সাদ্দাস ভালো কখনো দায়িত্ব অবহেলা করতে দেখিনি। কিন্তু কাল কেন এমন করলো বুঝতেছি না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গেটকিপার সাদ্দাম রেলের নিয়োগপ্রাপ্ত গেটকিপার নয়। একটি প্রকল্পের আওতায় ক্যাজুয়াল কর্মচারী হিসেবে কন্ট্রাকটর থেকে বেতন পায় । এই ক্রসিংয়ের সিগনাল সিস্টেম অকার্যকর। এখানে সিগন্যাল বাতি বাজে না, সিগন্যাল সিস্টেম অকেজো হয়ে আছে। অকেজো হয়ে পড়ে আছে টেলিফোন সেট।

এখনো ওই স্থানে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দেয়া খোদাই করা সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে ‘সাবধান, এই গেটে কোনো গেটম্যান নাই। নিজ দায়িত্বে সকল পথচারী ও যানবাহন চলাচল করিবেন এবং যেকোনো দুর্ঘটনার জন্য নিজেই দায়ী থাকিবেন।’

এদিকে ১১ জন নিহত হওয়ার পরও এই রেলগেট চলছে অস্থায়ী অপ্রশিক্ষিত ওয়েম্যান (রেলপথ সংস্কারের কাজে নিয়োজিত) দিয়ে। সুভাষ চন্দ্র দাশ নামের একজন ওয়েম্যান সেখানে গেটকিপারের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, ঝরনা সড়কে রেল গেটে লাইন থেকে তিনজনকে দেওয়া হয়েছে। আমরা এখন দায়িত্ব পালন করছি। একটি লেভেল ক্রসিংয়ে ৮ ঘন্টা করে ২৪ ঘন্টায় ৩ জন গেটকিপার দায়িত্ব পালন করার কথা থাকলেও দুর্ঘটনার আগ পর্যন্ত ১২ ঘন্টা করে দুজন গেটকিপার দায়িত্ব পালন করে আসছিলো।

গেটকিপার সুভাষ চন্দ্র দাশ বলেন, আমার রেলওয়ে ওয়েম্যান হিসেবে বারৈয়াঢালা ষ্টেশনে কর্মরত রয়েছে। গতকাল থেকে আমাদের এখানে উিউটি করারর জন্য বলা হয়। আমরা অস্থায়ীভাবে দায়িত্ব পালন করছি।

পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) আবুল কালাম বলেন, ‘এখন টেলিফোন নয়, মোবাইল ফোনে বার্তা দেয়া হয়।’ কম জনবল দিয়ে লেভেল ক্রসিং ব্যবস্থাপনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জনবল কমতো আছেই, তবে দুর্ঘটনার পূর্বে দুইজন ডিউটি করলেও তারা ১২ ঘন্টা হারে কাজ করতো।’

সাইরেন না থাকা প্রসঙ্গে বলেন, ‘বড় ক্রসিংগুলোতে সাইরেন থাকে।’ খৈয়াছড়া লেভেলক্রসিংয়ের দুই ধারে দুইটি পুরানো নেমপ্লেট এবং তাতে থাকা নির্দেশনা প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটাতো থাকলে অসুবিধের কিছু নেই। এটাতো সম্পূর্ণ পজেটিভ একটি বিষয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!