দৈনিক ফেনীর সময়

ফেনীতে বিনামূল্যে আইনি সহায়তায় আগ্রহ বাড়ছে

ফেনীতে বিনামূল্যে আইনি সহায়তায় আগ্রহ বাড়ছে

আরিফ আজম :

ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের ভাস্কর এলাকার বাসিন্দা আকাশ কুমার দাস কৃষ্ণ। একমাত্র আপন মামার কাছ থেকে ৬ শতাংশ জায়গা কেনেন তিনি। ওই জায়গা নিয়ে বিরোধের জের ধরে মামাতো ভাই শিপন গত বছরের ৩ নভেম্বর জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে আইনগত সহায়তার আবেদন করেন। এরপর পারিবারিক এই মামলায় ২০ ডিসেম্বর নিষ্পত্তি হয়।

আকাশ কুমার দাস কৃষ্ণ ফেনীর সময় কে জানান, সার্ভেয়ার দিয়ে কয়েকবার মাপা হয়েছে। সিএস খতিয়ান, কবলার মূল কপি, খাজনা রশিদ দেখানো হয়েছে। লিগ্যাল এইড অফিস আইনজীবী নিয়োগ করে মামলাটি নিষ্পত্তি করেছে।

জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তার কার্যালয়ের পরিসংখ্যানের তথ্যমতে, ২০২৩ সালে লিগ্যাল এইড অফিসের এডিআর (প্রি-কেইস) কার্যক্রমের আওতায় ২৩৪টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। ১৪টি মামলা চলমান রয়েছে। অর্থ আদায় হয়েছে ৫৫ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। আইনি পরামর্শ নিয়েছেন ৩১৯ জন। এর মধ্যে ২১১ জন নারী ও ১০৮ জন পুরুষ। পোস্ট-কেইস কার্যক্রমের আওতায় ৭টি মামলার নিষ্পত্তি হয়। ২০২২ সালে প্রি-কেইস এর আওতায় ১৯১টি ও পোস্ট-কেইসএর এর আওতায় ১২টি মামলা নিষ্পত্তি হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অসহায়, দরিদ্র, অসচ্ছল মানুষ যাতে বিনামূল্যে সরকারিভাবে আইনি সহায়তা পরামর্শ নেন, সেজন্য সচেতনতা সৃষ্টিতে প্রতিবছরের ২৮ এপ্রিল জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস পালন করা হয়। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘স্মার্ট লিগ্যাল এইড, স্মার্ট দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ”। জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার মাধ্যমে বিনা মূল্যে দেওয়া কার্যক্রমগুলোর মধ্যে আইনি পরামর্শ, আদালতে মামলা পরিচালনা, শ্রমিক সহায়তা, বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তি ও তথ্যসেবা রয়েছে।

২০০০ সালে ‘আইনগত সহায়তা প্রদান’ আইন করা হয়। এই আইন অনুসারে, ২০০১ সালে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা গঠন করা হয়। তবে জনবল ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর অভাবসহ নানা কারণে সূচনাকাল থেকে ২০০৯ সালের আগ পর্যন্ত সংস্থাটির কার্যক্রম ছিল স্থবির। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার জন্য পৃথক কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। পাশাপাশি প্রতিটি জেলা আদালতে সংস্থার কার্যালয় স্থাপন করা হয়। এখন দেশের ৬৪ জেলায় স্থায়ী লিগ্যাল এইড (আইনি সহায়তা) কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও রয়েছে লিগ্যাল এইড কমিটি। সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গণে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ‘সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কার্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করা হয়।

জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা ও সিনিয়র সহকারি জজ সুষ্মিতা আহমেদ ফেনীর সময় কে জানান, আইনগত সহায়তা কার্যক্রমের মাধ্যমে সমাজের হতদরিদ্র ও অসচ্ছল জনগোষ্ঠী বর্তমানে সরকারি খরচে আইনগত সহায়তা পাচ্ছে, যা বিচারব্যবস্থায় বড় অর্জন। এতে করে আদালতসমূহে মামলাজট হ্রাস করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!