দৈনিক ফেনীর সময়

ফেনীতে মসলার বাজার বেসামাল, ঝাল বেড়েছে কাচা মরিচের

ফেনীতে মসলার বাজার বেসামাল, ঝাল বেড়েছে কাচা মরিচের

নিজস্ব প্রতিনিধি :

পবিত্র ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে ফেনীতে আদা, পেঁয়াজ, রসুন, তেল, ধনিয়া, গুড়া ও কাঁচা মরিচ, হলুদ ও মসলাসহ নিত্য পণ্যের বাজার বেসামাল হয়ে উঠেছে। কোরবানির মাংস রান্না করার নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রত্যেক মসলায় কেজিতে ১৫০-২০০টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। সরবরাহ কম থাকা, পাইকারী বাজারে দাম ভাড়া, পণ্যবাহী যানবাহনের ভাড়া বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন অজুহাতে ব্যবসায়ীরা মসলা জাতীয় দ্রব্যের দাম বাড়িয়েছেন।

অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, ঈদ এলেই অসাধু ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব পণ্যের দাম কোনো কারণ ছাড়াই বাড়িয়ে দেয়।

মঙ্গলবার জেলা শহর সহ গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ঈদ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাজারগুলোতে হঠাৎ করে পেঁয়াজ, রসুন, আদা,তেলসহ বিভিন্ন প্রকার মসলার দাম বেড়ে গেছে। বাজারগুলোতে দেশী এক কেজি ১০০ টাকার আদা বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২০০টাকায়। চীনা আদা নাই, তবে থাইল্যান্ডের আদা বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪০০টাকা, পেঁয়াজ ৪৫-৪৮টাকা, বড় আকারের রসুন ১৭০-১৮০টাকায়, ছোট রসুন ১২০-১৩০টাকায়। দারুচিনি প্রতি কেজি ৪৮০-৫০০টাকা, জিরা ৯০০-১০০০টাকা, এলাচি ১৯০০- ২হাজার টাকা, লং ১৯০০-১৯৫০ টাকা, গোল ও সাদা মরিচ ১৮৫০-১৯০০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৩৫০-৪০০টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সয়াবিন তেল রুপচাঁদাসহ অন্যান্য তেল পাঁচ লিটার গায়ের দামের চেয়ে ৩০-৫০টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ক্রেতাদের থেকে বেশি নেওয়া হচ্ছে। তবে কোনো দোকানে পণ্যের মূল্য তালিকা দেখা যায়নি।

বড় বাজারের ব্যবসায়ী নুরনবী বলেন,এটা আড়তদাররা ভালো বলতে পারবেন। তবে আমাদের ধারণা বাজারে সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে। এর পেছনে কোনো বিশেষ চক্র থাকতে পারে। গত ৪/৫ দিন পূর্বে থেকে দাম বেড়েছে।

মোশারফ হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে।প্রশাসন ভালোভাবে বাজার মনিটরিং করলে দাম কমে আসতে পারে।

তিনি আরো বলেন, এক পোয়া কাঁচা মরিচ দাম ৮০ টাকা ভাবা যায়! আসলে বাজারে যাদের নজরদারির করার কথা তারা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছেন না। এ কারণেই মুনাফালোভী এক শ্রেণির ব্যবসায়ী ইচ্ছামতো কাচা মরিচের দাম বাড়াচ্ছেন। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ।

সবজি বিক্রেতা মো: মানিক বলেন, পণ্যের সরবরাহ কমে যাওয়ায় পাইকারী বাজারে কাঁচা মরিচ,শসা ও টমেটোসহ সব ধরনের সবজির দাম বেড়ে গেছে। বাজারে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৪০০টাকায়, টমেটো ১৬০-১৭০টাকা, শসা ৯০-১০০টাকা, গাজর ১২০-১৩০টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বাজারে ৫০টাকার নিচে কোন সবজি নেই।

লোকমান হোসেন বলেন, হঠাৎ দেশে কী এমন হয়ে গেল যে কাঁচামরিচের দাম এত হয়ে যাবে? এ সবই ব্যবসায়ীদের কারসাজি।

ব্যবসায়ী জিয়াউল হক বলেন, বৃষ্টিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে কাঁচা মরিচের ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আবার বগুড়া থেকে কাঁচা মরিচ আনার পরিবহনও কম। এখন বেশিরভাগ ট্রাক-পিকআপভ্যান কোরবানির পশু পরিবহনে ব্যস্ত। একদিকে মরিচের ক্ষেত নষ্ট হওয়া অন্যদিকে পরিবহন সংকটের কারণে বাজারে কাঁচামরিচের সরবরাহ কমে গেছে। এ কারণে দাম অস্বাভাবিক বাড়তে পারে।

সোনাগাজী পৌরশহরের খায়ের স্টোরের মালিক নুরুল আলম বলেন, কাঁচামালের বাজার সব সময় উঠা-নামা করে। পাইকারী বাজার থেকে মসলা বেশি দামে কিনতে হয় বলেই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে শহরের দামের সঙ্গে গ্রামের দামের অনেক পার্থক্য রয়েছে।

কলেজ শিক্ষক কাওসার আলম বলেন, তিনি কুমিল্লার একটি কলেজে চাকরী করেন। কুমিল্লার চেয়ে ফেনীতে মসলা দাম প্রায় ২০০-৩০০টাকা বেশি।

তিনি বলেন, ঈদ এলে এমনই মসলাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ে। আবার কিছু ব্যবসায়ী আছে। যারা শুধু পণ্যের দাম বাড়ানোর অজুহাত খোঁজে। এদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!