দৈনিক ফেনীর সময়

মাজারের দানবাক্সের রোজগার টেক্স মুক্ত কি?

মাজারের দানবাক্সের রোজগার টেক্স মুক্ত কি?

-নাজমুল হক

বাংলাদেশ ৮৫শতাংশ মুসলিম জন মানুষের দেশ। এদেশের ৬৮ হাজার গ্রামে প্রায় ৩ লক্ষাধিক মসজিদ আছে। মসজিদ, মাদরাসা, ফোরকানীয়া মোক্তব, এতিমখানা, হেফজখানা, কওমী মাদরাসা, আলীয়া মাদরাসা, খানকা শরীফ, মাজার, নুরানি মাদরাসার অভাব নেই। পীর ও মুরীদ এর অভাব নেই। ধমীয় দল ও গোষ্ঠির অভাব নেই। পীর পুজা ও পীরের আস্তানায় ভক্তদের দানের টাকায় পীরদের এবং তাদের সন্তানদের বিলাশী জীবন যাপনের কোন অভাব নেই।

বিভিন্ন অঞ্চলে মাজার ও খানকার বিশাল প্রভাব আছে। কেউ আটরশির ভক্ত, কেউ দেওয়ানবাগীর ভক্ত, কেউ চরমোনাই এর ভক্ত, কেউ জৈনপুরীর ভক্ত, কেউ ছারছীনার ভক্ত, কেউ এনায়েতপুরির ভক্ত, কেউ মাইজভান্ডারির ভক্ত। কেউ আমানত শাহের ভক্ত, কেউ বায়েজিদ বোস্তামীর ভক্ত, কেউ গরীবুল্লাহ শাহ এর ভক্ত। কেউ খানজাহান আলীর ভক্ত। কেউ হযরত শাহজালাল ও শাহপরান এর ভক্ত। এভাবে ছোট বড় মাজার ও পীর পুজারীর ভক্তদের যেমন অভাব নাই আবার দান খয়রাতের অভাব নেই।।মাজারের নামে দান বাক্সের অভাব নেই।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক সুন্নত ওয়াল জামাতের ব্যানারে মাজার পূজা প্রসার ও প্রচারে বড় সংগঠন আছে। তেমনি তরিকত ফেডারেশনের ব্যনারে রাজনৈতিক দলও আছে। আটরশির ব্যনারে জাকের পাটি রাজনৈতিক দল আছে। চরমোনাইর পীরের ইসলামী আন্দোলন নামে রাজনৈতিক দলের ব্যনারে সংসদ নির্বাচন করে আসছে।

বাংলাদেশের মাজার কমপ্লেক্সের চাকচিক্য দেখলেই বোঝা যায় কি পরিমান আয় ও ব্যয় করা হয়। চট্টগ্রামের মাইজভান্ডার, বায়জিদ বোস্তামী, গরীবুল্লাহ শাহ, আমানত শাহ। ঢাকার দেওয়ানবাগী, শাহআলীর মাজার, জৈনপুরীর খানকা। ফুরফুরা শরীফ। ফরিদপুরে আটরশির মাজার। বরিশাল বিভাগের চরমোনাই ও ছারছীনার মাজার। বাগেরহাটের খানজাহান আলীর মাজার।। সিরাজগঞ্জের এনায়েত পুরির মাজার। সিলেটের শাহজালাল এর মাজার এবং দেশের আনাছে কানাছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে হাজার হাজার খানকা, দরবার শরীফ ও মাজার। ভক্তরা বেহেশতের সার্টিফিকেট এবং সুপারিশ এর আশায় দান করে আসছে।

শীতের সময় ৩-১৫দিন ওরশ মোবরক এর পোস্টারে এবং ব্যানারে সারাদেশে উৎসব বিরাজ করে। ডোল তবলার আওয়াজ আর জারিসারী গানের হিড়িক পড়ে যায়। মাজার পুজারী এবং ভক্তদের পোশাক আশাক দেখলেই বুঝা যায় কে কোন পীরের অনুসারী। ভক্তরা নগদ টাকা, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, কবুতর, ধান, চাল, ফসল, ফল ফলাদি দান করে থাকে।। অনেক মাজারকে কেন্দ্র করে ব্যাংক, হাট ও বাজার এবং নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ফাড়ি স্থাপিত হয়েছে। এসব মাজারের লক্ষ টাকা এবং কোটি কোটি টাকা জমা পড়ে। কিন্তু তার কোন ভ্যাট এবং টেক্স আদায় করা হয় কিনা ?

বাংলাদেশ সরকার মাজারগুলো শিরক এর কেন্দ্র অথবা ইসলামের নামে মাদক ব্যবসা এবং অপরাধীদের আস্তানা কিনা যা দেশ এবং সমাজের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। মাজারের সাথে লক্ষ লক্ষ লোক জড়িত। মাজার নিয়ন্ত্রণ করে আইনের আওতায় আনা যায় এবং টেক্স আদায় করা যায়। একটি প্রবাদ আছে মাজার যেখানে গাজার আসর সেখানে। ডিজিটাল বাংলাদেশ এর টিভি চ্যানেলে মাজারের শিরক, বিদায়াত, গাজার আসরের সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

দেশে এত পীর থাকার পর রবিউল আউয়াল মাসে পাকিস্তান থেকে পীরের আগমন ঘটে। তৈয়ব শাহ চট্টগ্রাম আসেন ১৯৪৮ সালে। তৈয়ব শাহর স্থান দখল করেছেন তার ছেলে তাহের শাহ। বর্তমানে আসেন হামেদ শাহ এবং এরপর কালাম শাহ। চট্টগ্রামের বড় বড় ব্যবসায়ী ও সওদাগরেরা বরকতের আশায় কোটি কোটি টাকা পাকিস্তান হুজুরের পদতলে ছুঁড়ে মারেন।

দেশের অনেক রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, ব্যাংকার, শিল্পপতি মাজারের ভক্ত। অবাধে দান করে দানবীয়। সরকার কওমী মাদরাসাকে মূল শ্রোতের শিক্ষার কাছাকাছি নিয়ে আসছে। তেমনই সামাজিক ও মানবিক নিয়মানুবর্তিতার জন্য মাজারের নিয়ন্ত্রণ করা দরকার। উন্নত রাস্ট্র এবং উন্নত জাতি গড়তে হলে মাজারের নিয়ন্ত্রণ আইন করে শিরক বিদায়াত মুক্ত করা।

লেখক : গবেষক ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!