দৈনিক ফেনীর সময়

রেডক্রসের ত্রাণের কাপড়েই দাফন হয়েছিল বঙ্গবন্ধু’র

রেডক্রসের ত্রাণের কাপড়েই দাফন হয়েছিল বঙ্গবন্ধু’র

অনলাইন ডেস্ক:

রেড ক্রিসেন্টের (বাংলাদেশে সেই সময় নাম ছিল রেডক্রস) ত্রাণের কাপড়েই দাফন করা হয়েছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। রেডক্রস থেকে ত্রাণ হিসেবে পাওয়া যে কাপড় রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিতেন, সেই কাপড় দিয়েই তাঁর কাফন পড়ানো হয়। লাল-কালো পেড়ে সাদা জমিনের এ শাড়ি কাপড়ের পাড় দুটি ছিঁড়ে তা কাফনের কাপড় হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি অনুষ্ঠানে এই তথ্য উল্লেখ করতে গিয়ে আপ্লুত হয়ে পড়েন। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির নব নির্বাচিত বোর্ড সদস‌্যরা গত ৩ আগস্ট গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে জাতির পিতার হত্যাকাণ্ড ও তার দাফনের প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।

আবেগ আপ্লুত শেখ হাসিনা ওই সময় বলেন, ‘১৫ আগস্ট যারা মারা গেছেন- তাদেরতো কাফন-দাফন কিছু হয়নি। কিন্তু আব্বার লাশটা যখন টুঙ্গিপাড়া নিয়ে গেছে… আর্মি সোজা হেলিকপ্টারে করে সেখানে নিয়ে যায়। তারা কোনোমতে কবর খুঁড়ে মাটিচাপা দিয়েই চলে আসবে। কিন্তু তখন ওখানকার যে মাওলানা সাহেব এবং আমাদের কয়েকজন, তারা কিন্তু জোর করেছিলেন যে, না আমরা…। আমাদের মসজিদের ঈমাম সাহেবসহ সবাই বলেন যে, আপনারা যদি মনে করেন শহীদী ‍মৃত‌্যু তাহলে ওইভাবেই দিতে পারেন। তবে মুসলমানের লাশ- এটা তো একটু কাফন-দাফন দিতে হবে।’

সেসময় সব এলাকায় কারফিউ‌ ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সব বন্ধ। টুঙ্গিপাড়ায় তখন কোনও দোকানও ছিল না। যেতে হতো সেই পাটগাতী বাজারে। তখন রেডক্রসের যে কাপড় তিনি (বঙ্গবন্ধু) সাধারণ মানুষদের বিলাতেন ওই কাপড় নিয়ে এসে তার পাড় ছিঁড়ে.. সেটাই কিন্তু তিনি নিয়ে (কবরে) গেছেন। আর কিছু নেননি মানুষের কাছ থেকে, আর কিছুই নেননি। সেই রেডক্রসের কাপড়েই ওনার কাফন… এটা হলো বাস্তবতা। আর আমাদের যারা (মা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ও তিন ভাইসহ অন্যরা) মারা গেছেন তাদের তো কিছুই করা হয়নি। যে যে অবস্থায় ছিল সেই অবস্থায় বনানী কবরস্থানে মাটি দেওয়া হয়েছে।’

‘মানবতার কল্যাণের জন্য জাতির পিতা এ সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন’, উল্লেখ করে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করার পর সেই রেডক্রসেরই এক টুকরো কাপড়কে কাফন বানিয়ে তাকে দাফন করা হয়েছিল।’

জেনেভাভিত্তিক আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা রেডক্রস স্বাধীনতার পরপরই বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিকে সরকারের প্রধান সহযোগী ত্রাণ সংস্থা হিসেবে নিয়োজিত করেছে। ১৯৮৮ সালে সরকার রেডক্রস সোসাইটির নাম ও প্রতীক পরিবর্তন করে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি করা হয় এবং প্রতীক রেডক্রসের পরিবর্তে রেড ক্রিসেন্ট (বাঁকা চাঁদ) হয়। মুসলিম দেশে এ সংগঠনটি রেডক্রিসেন্ট নামে পরিচিত।

টুঙ্গিপাড়ায় স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জাতির পিতার লাশ হত্যার পর দিন ১৬ আগস্ট দুপুরে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে করে টুঙ্গিপাড়া নেয়া হয়। তাঁকে ‘তিব্বত ৫৭০’ (কাপড় কাঁচা) সাবানে গোসল করিয়ে রিলিফের কাপড়ের কাফন দিয়ে সমাহিত করা হয়। জানাজায় গ্রামবাসী অংশগ্রহণ করতে চাইলেও দেওয়া হয়নি। দাফন অনুষ্ঠানে টুঙ্গিপাড়া, পাটগাতী ও পাঁচকাহনিয়া গ্রামের মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ জন অংশগ্রহণ করতে পেরেছিলেন। সেনা ও পুলিশ হেফাজতে তড়িঘড়ি করে দাফন সম্পন্ন করা হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!