দৈনিক ফেনীর সময়

সংঘাতময় নির্বাচন জাতীয় সংকট বয়ে আনে

সংঘাতময় নির্বাচন জাতীয় সংকট বয়ে আনে

উপ-সম্পাদকীয়

জাহাঙ্গীর আলম :

সংঘাত ও সহিংসতা কখনো শান্তির বার্তা বহন করে না। সংঘাত শান্ত জনপদে অশান্তির দাবানল ছড়ায়। গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে সেই লেলিহান শিখা দাউদাউ করে জ্বলতে থাকে। অনিবার্য ধ্বংসের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত হয় গ্রাম,নগর,শহর, নারী, পুরুষ এবং নিষ্পাপ শিশু। আমরা এমন একটি নগর-রাষ্ট্র দেখতে চাই যেখানে কোন জননীর বুক শূন্য হবে না। আগুন বা পেট্রোলবোমায় ঝলসে যাবে না কোন শরীর। পুড়ে ছাই হয়ে যাবে না কোন বস্তুির শিশু, বসতবাড়ি, গার্মেন্টস কিংবা শিল্পশ্রমিক। অপরাজনীতির বিষাক্ত ছোবলে জাতি হারাতে চায় না কোন সন্তানের জীবন। স্বার্থান্বেষী রাজনীতির বলী হবে না আর কেউ। এসব নোংরা খেলা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। নির্বাচন আসলেই রাজনীতির প্রকৃত মুখোশ উন্মোচন হয়ে যায়। পেশীশক্তির মহড়া দিতে গিয়ে বস্ত্রহীন হয়ে পড়ে রাজনীতির অবয়ব। এই শক্তি সর্বাগ্রাসী রাহুর মতো অতিকায় দানবীয় মূর্তি ধারণ করে এবং ভোটের পরিবেশকে বিভীষিকাময় করে তোলে। যেনতেন প্রক্রিয়ায় জয় লাভ করতে দানবীয় প্রতিযোগিতা মত্ত হয়ে পড়ে কিছু কিছু প্রার্থী। এদের পেশীশক্তি ও কালোটাকার কাছে বশ্যতা স্বীকার করে প্রশাসন উল্লেখযোগ্য অংশ। অর্থ লোলুপ, নীতিহীন কিছু প্রশাসনিক ব্যক্তি যখন স্বার্থের বিনিময়ে নিজের পবিত্র দায়িত্বের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করে, কিছু মাসোয়ারা পেয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতবাজদের পক্ষাবলম্বন করে ন্যায়ের শাসনের সমাধি রচনা করতে মাঠে নেমে পড়ে তখন সংগাতের পরিস্থিতি অবারিত হয়। দেশের সার্বিক উন্নয়নে, সমাজের আভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় এবং রাষ্ট্রীয় জীবনধারাকে গতিশীল ও নিরবচ্ছিন্ন ভাবে এগিয়ে নিতে অংশগ্রহণ মূলক, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রয়োজন। এই নির্বাচনের পরিবেশ হতে হবে সমতল ও প্রতিদ্বন্দ্বী সব প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ -সুবিধায় পরিপূর্ণ। কোথাও উঁচু কোথাও নিচু এমন বন্ধুর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হওয়া নির্বাচনের মাধ্যমে কখনো জাতির প্রত্যাশার প্রতিফলন হয় না। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হলে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা চলমান থাকে। বিতর্কিত নির্বাচনে বিজয়ীরা সরকার গঠন করলেও উন্নয়নকাজে শতভাগ মনোনিবেশ করতে পারেন না। ক্রমান্বয়ে সরকার জনবিচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। শুরুথেকেই সরকার বিরোধী পক্ষ সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করতে মাঠে নেমে আসে। হরতাল,অবরোধ, অসহযোগের মতো কঠিন কর্মসূচী নিয়ে রাজপথে সরব হয়ে উঠে জনগণ। জ্বালাও পোড়াও এর মতো ধ্বংসাত্মক রাজনীতির অবতারণা ঘটে জনজীবনে ভোগান্তি চরমে নেমে আসে।

একতরফা জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০১৪ সালে বাংলাদেশে আগুন সন্ত্রাসের মতো ঘৃণ্য পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। এই জঘন্য অপরাধে বহু নারী, পুরুষ, শিশু হতাহত হয়েছিল। ঐ সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্নইউনিটের অগ্নিদগ্ধ মানুষের আর্তনাদে আকাশে বাতাসে ঘৃণা ও শোকের ছায়া পড়েছিল। আমাদের দেশের নোংরা রাজনীতির সুযোগ নিয়ে মানুষ নামের কিছু অমানুষ চলন্ত গাড়িতে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে জীবন্ত মানুষকে পুড়ে মেরেছিল। বাংলাদেশে এই জাতীয় পৈশাচিকতা তার আগে কখনো দেখা যায় নি। কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো এটাই যে, এ ঘটনা নিয়েও দোষারোপের রাজনীতি দেখেছে জাতি। সরকার বলেছে হরতাল যারা আহবান করেছে তাদেরকে এর দায়দায়িত্ব নিতে হবে। এই ইস্যুতে বিরোধী দলীয় নেত্রীসহ অনেক কেন্দ্রীয় নেতার নামে অভিযোগের ভিত্তিতে বহু মামলা হয়েছে। জেলে যেতে হয়েছে। সেই মামলা চলছে। আবার বিরোধী দল বলেছে, তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে সরকারের ইন্ধনে তৃতীয় কোন পক্ষ এমন কাজ করেছে। বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতার শক্তি দিয়ে তাৎক্ষণিক অপরাধীদেরকে ধরা হয়ে থাকলে নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে এর মূলহোতাদের খুঁজে বের করা প্রয়োজন ছিল। এটি জানা আবশ্যক। কারণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকারের অগণতান্ত্রিক আচরণ তথা স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করা গণতান্ত্রিক অধিকার নয় শুধু, অপরিহার্য দায়িত্বও বটে। রাষ্ট্রের বিরোধী দলগুলো দেশ ও জাতির স্বার্থে এদায়িত্ব পালন করবে। বিরোধী দল সরকারের আয়না। বিরোধী দল সরকারের দোষত্রুটি ধরিয়ে দেবে। ক্ষমতার তেজস্ক্রিয়তায় পাগলাঘোড়ার মতো ছুটতে থাকলে লাগাম টেনে ধরবে। এগুলো বিরোধী দলের কাজ। কোন দলই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় চিরস্থায়ী নয়। পাওয়ারফুল দলেকেও কখনো কখনো বিরোধী দলে যেতে হয়। সরকারে থাকা অবস্থায় ভিন্নমত দমানোর অপতৎপরতা দেখালে তা পরিবর্তীত সময়ে আরো প্রবল ভাবে দেখা দেয়। এজন্য দোষারোপের সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসা অতীব জরুরী। বিশেষ করে রক্তের বিনিময়ে কষ্টার্জিত বাংলাদেশকে বিভেদ ও কলহ মুক্ত রাখতে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোকে এমন একটা কমিটমেন্টে বা প্রতিশ্রুতির জায়গায় এসে অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে হবে যেন দলের ভেতর থেকে চিরতরে অগণতান্ত্রিক মহড়া ও স্বেচ্ছাচারিতা দূর হয়ে যায়। ক্ষমতার পালা বদল যেন যথাযথ গণতান্ত্রিক উপায়ে হয়। ক্ষমতায় আরোহণও যেন গণরায়ের ভিত্তিতে শতভাগ গণতান্ত্রিক উপায়ে সম্পন্ন হয়। তাতেই দেশের কল্যাণ। যে কোন দেশে গণতন্ত্রিক যাত্রার প্রাথমিক পদধ্বনি শুনা যায় সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনী পরিবেশের মাধ্যমে। নির্বাচন যদি সংঘাত মুক্ত হয় তাহলে গণতন্ত্রের যাত্রা কুসুমাস্তীর্ণ হয়। মানুষ নিজেদের অধিকার ফিরে পায়। রাষ্ট্রের সকলস্তরে গণতন্ত্রের শুদ্ধ চর্চা শুরু হয়। তখন সমাজে দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালন হয়। প্রাত্যহিক জীবনযাত্রায় গণতন্ত্রের সুফল ও সুশাসন ফিরে আসে। আর যদি নির্বাচন সংঘাতময় হয় তখন গণতন্ত্রের যাত্রা কণ্টকাকীর্ণ হয়ে পড়ে। সমাজে প্রতিহিংসার চর্চা শুরু হয়। স্বাভাবিক জীবনধারা বিঘ্নিত হয়। ন্যায়ের শাসন পদদলিত হয়। দলীয় তৈলবাজ ও সুবিধাভোগীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। অসৎলোকেরা সংঘবদ্ধ হয়ে দলীয় আনুকূল্যে এসে নানান অপরাধ করতে থাকে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে শাসন ক্ষমতার মূলশক্তি হলো জনগণ। জনগণকে সাথে নিয়ে যারা সরকার গঠন করে কেবল তারাই জনমতকে সম্মান করে। জনস্বার্থে রাষ্ট্রীয় পলিসি গ্রহণ করে ও পরিবর্তন করে। জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনপুষ্ট যে কোন রাষ্ট্রপ্রধান রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা অপরাধী চক্র যত শক্তিমান হোক না কেন, জনতার শক্তির উপর নির্ভর করে তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে পিছু হটে না। বিপরীত দিকে এর কিছু ব্যতিক্রম উদাহরণও দেখতে পাওয়া যায়। যে রাজনৈতিকদল জনরায়ের তোয়াক্কা না করে, পেশীশক্তি ও টাকার জোরে একশ্রেণীর প্রশাসনের সহযোগিতা পেয়ে ভোটকেন্দ্র দখলে নিয়ে ভোট ছিনতাইয়ের মাধ্যমে বিজয় লাভ করে তারা আর যাই হোক জনগণের শাসক হতে পারে না। দুর্বলভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত সরকারের শাসন খুবই ভয়ানক হয়। যাকে রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলতে হয়, “দুর্বলের শাসন ভয়ংকর।” ঐ সরকার সমাজে ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। তাদের হাতে মানবতা ও মানবাধিকার পদেপদে লঙ্ঘিত এবং পদদলিত হয়। জনতার অধিকার যারা হরণ করে, তারা জনগেেণর উপর নির্ভরতা হারায়। প্রশাসনের বন্দুকের উপর নির্ভর করে যারা ক্ষমতায় আরোহণ করে ঐ সরকার প্রশাসনকে চরম ভয় পায়। তাই সর্বত্র প্রশাসনকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে মূল্যায়ন ও সমীহ করে চলে। সেক্ষেত্রে প্রশাসনের কোন দোষত্রুটি ধরার সাহস রাখে না। এই সুযোগ গ্রহণ করে ধীরেধীরে জাতির প্রত্যাশা ও বিশ্বাসের শ্রেষ্ঠমাধ্যম প্রশাসনরন্ধ্রের মাঝে অনিয়ম ও অপরাধ এসে বাসা বাঁধতে শুরু করে।এর ধারাবাহিকতায় সমাজদেহ ক্ষতবিক্ষত হয়ে পচনধরে। অনির্বাচিত সরকার অথবা সংঘাত -সংঘর্ষে রক্তপাতের মধ্যদিয়ে কোন সরকার গঠিত হলে জাতীয় জীবনে নানাবিধ সংকট তৈরি হয়। এর বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করা যেতে পারে। যথাক্রমে, ১) গণঅসন্তোষের রোষানলে পড়ে সরকার দিশেহারা হয়ে নিজের অস্তিত্ব টিকানোর লড়াইয়ে অবর্তীর্ণ হয়ে পড়ে।

(২) দেশ পরিচালনার চেয়ে ভিন্নমত দমন- নিপীড়নে অধিক মনোযোগী হয়। (৩) ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য রাষ্ট্রের প্রশাসনের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। (৪) প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিসহ পুরো প্রশাসনকে অনুগত রাখতে রাতারাতি অযাচিত ভাবে নানান সুযোগ সুবিধার (পদায়ন, পদোন্নতি, বেতনভাতা বৃদ্ধি, পছন্দের স্থানে বদলী,ইচ্ছের অনুকূলে চাকুরীসহ যাবতীয় )সু- ব্যবস্থা করে দিতে অধিক আগ্রহী হয়ে উঠে। (৫) দলীয় চেইন অব কমান্ড ধরে রাখতে নেতৃস্থানীয়দের টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, তথাকথিত কন্ট্রাক্টরি, চোরাচালানীসহ নানান উপায়ে অর্থ উপার্জনের অবাধ সুবিধা দেওয়া হয়ে থাকে। (৬) গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতায় হস্তক্ষেপ করে এবং বিরোধী দলগুলোর দলীয় কর্মসূচিতে প্রবল বাধা হয়ে দাঁড়ায়। (৭ ) গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। একদলীয় শাসন বা সহমতের বহুদলীয় শাসনের দিকে ধাবিত হয়। (৮) দমননীতি চালিয়ে গণমানুষের কণ্ঠ বাজেয়াপ্ত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়। (৯) গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করতে হত্যা ও ভয়ভীতিসহ নানান কৌশল অবলম্ব করে থাকে। (১০) মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধির অনুশীলনকারী সাংবাদিক, কলামিস্ট,শিল্পী, সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবীদের টার্গেট করে গ্রেপ্তার, গুম,খুন ক্রমাগত হারে বাড়তে থাকে। (১১) সাম্প্রদায়িক কলহ সৃষ্টির মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যের চেতনাকে বিনষ্ট করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়ে থাকে। (১২) জনবিচ্ছিন্ন সরকার প্রথম থেকে ভয়ংকর রূপে শাসন প্রক্রিয়া চালাতে থাকে। (১৩) সরকারের আশির্বাদপুষ্ট হয়ে একশ্রেণীর প্রভাবশালীরা লুটেরা হিসেবে আবির্ভূত হয়। তারা নানাবিধ অনিয়মে জড়িয়ে পড়ে। এই চক্র ব্যাংকিংখাতে অনিয়ম, রিজার্ভ চুরি, অর্থ আত্মসাৎ, বিদেশে টাকা পাচার, দুর্নীতি, ঘুষবাণিজ্য, রাজস্ব ফাঁকিসহ নানান অপরাধে লিপ্ত হলেও তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সাহস পায় না জনবিচ্ছিন্ন সরকার। দীর্ঘ আলোচনা-সমালোচনার পর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সে নির্বাচনের কলঙ্কিত ইতিহাস বলতে গেলে দেশের স্বাধীনতা অর্জনের গৌরব মুখ থুবড়ে পড়ে। এই বিকৃত নির্বাচনের সত্যতা স্বীকার বা অস্বীকার করা নিয়ে যে যাই ভাবুক না কেন, প্রকৃত সত্য হলো এমন নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশ নামক দেশের জন্ম হয়নি। মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই মূলত স্বাধীনতা সংগ্রাম সূচিত হয়েছিল।

সে বিষয়ে আজকের আলোচনা দীর্ঘ না করবো না। শুধু বলবো, সময়ের পরিক্রমায়, একচেটিয়া নির্বাচনের ধারাবাহিকতায় আসন্ন ২০২৪ সালের জাতীয়সংসদ নির্বাচন আমাদের দোরগোড়ায় এসে কড়া নাড়ছে।নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা মোতাবেক আগামী ৭ জানুয়ারি দেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে দেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিকদল ও সিংহভাগ মানুষের দাবী উপেক্ষিত হয়েছে। রাজনৈতিক বোঝাপড়া ও মধ্যস্থতা না হওয়ায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট নির্বাচন বয়কট করেছে। যার ফলে অনেকটা ২০১৪ আদলেই আরেকটা বিতর্কিত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে।

বিরোধী দলগুলোর দাবী উপেক্ষা করে দেশের সিংহভাগ মানুষের প্রত্যাশাকে পদদলিত করে অতীতের মতো প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার পায়তারা চলছে। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বিরোধী দলগুলো ইতোমধ্যে নির্বাচন বয়কট করতে দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ করছে। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বেশ কিছু দিন ধরে বিরোধীদলের অবরোধ কর্মসূচি চলছে। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে একশ্রেণির দুর্বৃত্ত বাসে আগুনসহ নানান নাশকতা সৃষ্টি করছে। যা দেশের মানুষের অধিকার সুরক্ষায় কাম্য নয়। সুতরাং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সর্বস্তরে গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে শাসকদলকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। দেশে শান্তি ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করে একটি অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচন উপহার দিতে হবে।

বাঙ্গালি জাতির ঐক্য- সংহতি বজায় রাখতে এই নির্বাচন ইতিহাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে, উন্নত ও অবিতর্কিত কার্যকর রাষ্ট্র গড়তে এই নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়া এখন সময়ের দাবী। নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসুক তাতে জাতির আক্ষেপ থাকার কথা নয়। বরং এতেই দেশের কল্যাণ। কোন প্রার্থী চর দখলের মতো ভোটকেন্দ্র দখল করে নিয়ে জ্বালাও-পোড়াও এর মতো বিভীষিকার পরিবেশ সৃষ্টি করুক তা জাতি দেখতে চায় না। সন্ত্রাসের মধ্যদিয়ে কখনো শান্তির জনপদ আশা করা যায় না। সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত প্রিয় বাংলাদেশকে অনিবার্য সংঘাতের দিকে ঠেলে না দিতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা নিশ্চয় চাইব না যে, নির্বাচনের নোংরা রাজনীতিতে জড়িয়ে জাতি দৃশ্যমান ভোটযুদ্ধে লিপ্ত হয়ে প্রাণ হারাক। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমাদের সামাজিক সৌহার্দপূর্ণ মেলবন্ধন রক্তস্রোতে ভেসে যাক তা কারো কাম্য হওয়া উচিত নয়। জাতীয় নেতৃবৃন্দের ভুলের দায়ে যদি এমন কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তা দেশে মহাসংকট বয়ে আনবে। এই সংকট যতই দীর্ঘস্থায়ী হবে ততোই মানবেতর জীবনের গ্লানি বহন করতে হবে গোটা জাতিকে।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, কবি ও প্রাবন্ধিক।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!