দৈনিক ফেনীর সময়

সোনাগাজীর মোখা আতংকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চান না মানুষ

সোনাগাজীর মোখা আতংকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চান না মানুষ

নিজস্ব প্রতিনিধি :

শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবিলায় সোনাগাজীতে ক্ষয়ক্ষতিসহ জানমালের রক্ষা করতে উপজেলায় ৪৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ৮নং মহাবিপদ সংকেত জানিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের সর্তকবার্তা উল্লেখ করে উপজেলার সর্বত্র সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রচারনা চালানো হচ্ছে।

ঘূর্ণিঝড়ে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। জনসচেতনতা বাড়াতে চলছে মাইকিংসহ নানা প্রচার। প্রাণহানির হাত থেকে উপকূলবাসীকে রক্ষা করতে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলা হচ্ছে। কিন্তু জানমালের ঝুঁকি জেনেও বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে তেমন একটা আগ্রহী নন উপকূলের বাসিন্দারা।

উপজেলার সদর ও চর চান্দিয়া ইউনিয়নের উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা জেলে ও শ্রমজীবী মানুষগুলো বলছে, প্রতিনিয়ত তারা ঝড়, জলোচ্ছাস, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে টিকে আছেন। প্রশাসন তাদের ঘর-বাড়ি সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ঘোষণা দিলে তারা দুর্যোগে আশ্রয়কেন্দ্রমুখী হবেন।

গতকাল শনিবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তিনটি লাল পতাকা উঠিয়ে ঘূর্ণিঝড়ের বিপদ সংকেত দেখানো হচ্ছে। চলছে সচেতনতামূলক প্রচারনা, সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে প্রশাসন সব ধরণের প্রস্তুতি নিলেও আশ্রয়কেন্দ্রগুলো এখনও খালি পড়ে আছে। কোনোভাবে ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়ণে যেতে চাচ্ছেন না স্থানীয়রা। তবে কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রের নিচে খালি জায়গায় বেশ কিছু গবাদিপশুকে নিরাপদে এনে রাখা হয়েছে।

উপজেলার জেলেপাড়ার বাসিন্দা হর লাল জল দাস বলেন, তারা সারা বছর ঝড়-তুফানসহ নানা প্রতিকুল পরিস্থিতি উপেক্ষা করে নদী ও সাগরে গিয়ে মাছ ধরেন। এখন ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ায় তারা উপকূলে বাড়িতে নিরাপদে রয়েছেন। কিন্তু আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে তেমন লাভ নেই। তা ছাড়া সেখানে গিয়ে গাদাগাদি করে থাকতে হবে মনে করছেন তারা। বাড়ি ঘরের চিন্তায় ঘুম হয় না। এজন্য তারা আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চান না।

চর খোন্দকার এলাকার বাসিন্দা নিরঞ্জন জল দাস বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে। ৬০ বছর বয়সে কত ঘূর্ণিঝড় দেখেছি, এসবে আমরা ভয় পাই না। ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে েেগলে, ঘরে তো কিছু থাকবে না। সব লুট হয়ে যাবে। বাড়ির পাশের নদীর তীরে নৌকা-জালসহ লাখ টাকার সম্পদ পড়ে আছে। এসব ছেড়ে তো অল্প কটা চিড়া-মুড়ির জন্য আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারি না।

জেলেপাড়ার আরেক বাসিন্দা ফুল রানী জল দাস বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে বসবাসের জন্য নারীদের জন্য ভালো ব্যবস্থা নেই। নিরাপত্তা নেই, তাই ঘরেই ভালো। পানি না ওঠা পর্যন্ত আমরা বাড়িতে আছি।

উপজেলার দক্ষিণ পূর্ব চর চান্দিয়া এলাকার সিপিপির দল নেতা নুর নবী বলেন, শুক্রবার বিকালে থেকে তারা এলাকায় মাইকিং করে জনগনকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলছেন। এছাড়া গবাদিপশুগুলোকেও নিরাপদে সরিয়ে নিতে তারা প্রচারনা চালাচ্ছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, ঘূর্ণিঝড় ও দূর্যোগ মোকাবিলায় এবং জানমালের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনাসহ জনগনকে সর্তক করার লক্ষ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক মাইকিং করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় সোনাগাজীতে ৪৩টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রসহ উপজেলার সবকটি বিদ্যালয়কে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপজেলায় একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে এবং ১৪টি চিকিৎসক দল, জনপ্রতিনিধি, ফায়ার সার্ভিস, আনসার ও ভিডিপি এবং গ্রাম পুলিশের সদস্যরা মাঠে কাজ করছেন। দূর্যোগকালী উদ্ধার তৎপরতাসহ বিভিন্ন কাজের জন্য সিপিপির দুই হাজার স্বেচ্ছাসেবকসহ প্রায় ৫ হাজার কর্মী মাঠে কাজ করছেন।

ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতির কর্মসূচীর (সিপিপি) সহকারি পরিচালক মুনীর চৌধুরী বলেন, ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে উপজেলার সর্বত্র সিপিপির সদস্যরা কাজ করছেন। প্রতিটি এলাকায় সিপিপির সদস্যদের সহায়তায় জনগনকে ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে সর্তক করে জানমাল ও গবাদিপশুর নিরাপদ আশ্রয়ে নিতে কাজ করে যাচ্ছেন। ঘূর্ণিঝড় আসায় উপক‚লীয় এলাকার বাসিন্দারা অনেকে আতঙ্কে রয়েছে। এছাড়া উপক‚লীয় অঞ্চলের জেলেদেরকে দূর্যোগকালীন সময়ে নদীতে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!