দৈনিক ফেনীর সময়

২০২৪-২০২৫ এর বাজেট যেমন হওয়া উচিত

২০২৪-২০২৫ এর বাজেট যেমন হওয়া উচিত

দিদারুল আলম মজুমদার

জনগণের মৌলিক অধিকার কে মাথায় রেখে বাজেট তৈরি হওয়ার সমীচীন। এটি একটি দেশের সাংবিধানিক অধিকার। যে দেশ বা রাষ্ট্র এই সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে পারেনি সেই দেশের পরিচয় তলা বিহীন ঝুঁড়ি। যখনই কেউ দশের কথা চিন্তা না করে নিজের চিন্তায় বেশি ব্যস্ত হয়, তখনই জুড়িটা তলাবিহীন হয়ে যায়। যে জুড়িতে কোন কিছু রাখা মাত্রই রক্ষিত থাকে না সেই ঝুড়িটা কখনো কিছু ধারণ করতে পারবে না। তাই বলা হয় রক্ষক যদি ভক্ষক হয় তখন কোন কিছুরই কুলকিনারা থাকে না।

আমাদের দেশের সংসদে বাজেট যখনই পেশ হবে তার আগে অর্থনীতিবিদ রাজনীতিবিদ বাজেট বিশেষজ্ঞ সকলেই কথা বলা শুরু করেন। কিন্তু কে শুনে কার কথা, কপি পেস্ট করে অতীতের খাতগুলোর সাথে কিছু যোগ বিয়োগ করে একটি বাজেট পেশ করতে পারলেই আমাদের অর্থমন্ত্রী তার দলীয় সংসদ সদস্যদের কাছে মারহাবা পেতে থাকেন। এই বাজেটের বন্দনা চলতে থাকে বেশ কিছুদিন। আবার বিপরীত দিকে বিরোধী দলগুলো আগে থেকেই বাজেট বিরোধী ব্যানার ছাপিয়ে রেখে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদী মিছিল শুরু করেন। রাজপথে উচ্চারিত হয় জনবিরোধী বাজেট মানি না মানবো না। এই বাজেট জনবিরোধী এই বাজেট মানিনা।

আসলেই কি আমরা অতীতের বা সামনের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের বাস্তবমুখী ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে পড়াশোনা করে আমরা কোন বক্তব্য গঠনমূলক দেই কিনা তাই পর্যালোচনার দাবি রাখে। আমরা সবাই বলি বিলাস সামগ্রির উপর শুল্ক ট্যাক্স ভ্যাট ইত্যাদি বৃদ্ধি করতে। যা দেশের অর্থশালী লোকেরা ব্যবহার করে থাকেন। তন্মধ্যে প্রাইভেট গাড়ি এসি ফ্রিজ ইত্যাদি রয়েছে। আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে এখন এই চাপানো গোল সামগ্রী বিলাস সামগ্রী না হয় এখন প্রয়োজনীয় সামগ্রীতে রূপান্তরিত হয়েছে। তাই এবারের বাজেটে বিষয়টি গুরুত্ব পাবে বলে আশা করি।

সহায় সম্পদের ক্ষেত্রে যাদের অনেক সম্পত্তি রয়েছে এবং আরো সম্পত্তি যুক্ত হচ্ছে, তাদের রেজিস্ট্রি খরচ ও যাদের মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের জন্য সম্পদের জন্য রেজিস্ট্রি খরচ এক হবেনা বলে আশাকরি। কোম্পানিগুলো যেহেতু অনেকের চাকুরীর ব্যবস্থা করে থাকেন সেহেতু ব্যক্তির সম্পদের রেজিস্ট্রেশন খরচের চাইতে কোম্পানির সম্পদের রেজিস্ট্রেশন খরচ কম হওয়া আবশ্যক। এক্ষেত্রে দেখা যায় ব্যক্তির সম্পদের রেজিস্ট্রেশন খরচের চাইতে কোম্পানির সম্পদের রেজিস্ট্রেশন খরচ দ্বিগুণ।এটি কোনভাবে কাম্য নয়।

সরকারের আয়ের খাত বৃদ্ধি ও ট্যাক্স ভ্যাট আদায়ে সরকার বিভিন্ন কৌশল নিয়েছেন।সারচার্জ আদায়ের মাধ্যমে অপারগ লোকদের আরো আঘাতে আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে যাচ্ছেন।একক ভাবে ইচ্ছে মত যেখানে যা ধরলে সরকারের সুবিধা, সেখানে তা নির্ধারণ করে আদায়ের জন্য লোক নিয়োগ দিয়ে কমিশনিং সিষ্টেমে কালেকশন করে যাচ্ছেন। রাস্তা ঘাটে গতি নিয়ন্ত্রণের নামে পর্যাপ্ত ফ্লাশ লাইট পোস্ট এর সিষ্টেম না করে ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি ও কমিশন সিষ্টেম মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।প্রাইভেট গাড়ির বার্ষিক ট্যাক্স টোকেন নবায়নে টাকার পরিমান সক্ষমতার সক্ষমতার বাহিরে।

শিক্ষা খাতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি তবে এফিলিয়েটেড সকল প্রতিষ্ঠান সার্ভিস ওরিয়েন্টেড হিসেবে বছরে একটি অনুদান সরকার থেকে পেতে পারে। তারা কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠানের চাইতে কোন অংশে যোগ্য লোক তৈরিতে পিছিয়ে নেই। বরং কোন কোন ক্ষেত্রে তারা ভালো রেজাল্টের মাধ্যমে এগিয়ে আছে।

যারা দেশের টাকায় বড় ডিগ্রি নিয়ে প্রবাসে সেটেল হয়েছেন তাদের ইনকামের ৩% টাকা দেশে রেমিট্যান্স আনয়নের যে পরামর্শ অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার দিয়েছেন, তা বাস্তবায়িত হলে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের ধন্যদশা থাকতো না। এবারের হীট স্ট্রোকে যে শিক্ষকদের বিয়োগ হয়েছে,তা থেকে আমরা রক্ষা পেতাম।

অনেক শিক্ষক এবার আন্দোলন সংগ্রাম করেও সরকারের কাছে কিছুই পায়নি। আমাদের মনে রাখতে হবে, শিক্ষকদের সম্মান এবং বেতন বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা একটি সুন্দর জাতি উপহার দিতে পারবো। আরেকটি বিষয় না বললেই নয়, আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও তার গবেষণা সেল গুলো আমাদের ঈমান আকিদা ও কৃষ্টি কালচার এর আলোকে বই পুস্তক দিতে ব্যর্থ হয়েছে। একটি জাতি তার ডিজাইনে লোক তৈরি করতে না পারলে সে জাতির মেরুদণ্ড সোজা রাখতে পারে না যে তা সর্বময় স্বীকৃত জেনেও আমরা প্রতিবেশী দেশের বই কপি পেস্ট করে এবং সেখান থেকে বই চাপিয়ে আমাদের ব্যবসায়ীদেরকেও সংকটে ফেলেছি।

সরকার কোথাও কোন উৎপাদনের কল কারখানা বন্ধ হতে দেখলে তার পাশে না দাঁড়িয়ে তার আয়োজনকে রুগ্ন শিল্পে পরিণত করে। এতে উৎপাদকের জন্ম হয় না। তাই আমরা আমদানি নির্ভরতা কমাতে পারিনি। নতুন উৎপাদন ক্ষেত্র তৈরিতে নানাবিধ অনুমোদন সিস্টেম উদ্যোক্তাদের হতাশ করে যাচ্ছে। তাই এসব বিষয় সরকারের নখদর্পণে থাকতে হবে।

শহর উন্নয়নের পাশাপাশি মফস্বল উন্নয়ন পরিকল্পনা জরুরী। রাস্তা ঘাটের উন্নয়নের সাথে সাথে কৃষি নির্ভর দেশ হিসেবে কৃষি খাতকে এগিয়ে নিতে সরকারি সাবসিডি আরো বেশি জরুরি। আগে ছিল ঘোলা ভরা ধান আর পুকুর ভরা মাছ মানেই সমাজের উচ্চ মানুষ। এখন তাতেও এক একজন কৃষকের লোকসান গুনতে হয় বিধায় অনেকে একাজ থেকে পিছিয়ে যায়। শ্রমিকের দাম বেড়েছে, কিন্তু ধানের দাম বাড়েনি। এসব মিলে কৃষিতে ব্যাপকভাবে অনীহা বিরাজমান। মাছের প্রজেক্টের জন্য কম মুনাফায় বিদেশি বিনিয়োগ সুবিধা যা আসে তাতে দেখা যায় কিছু লোকের পেট ভরে, সার্বজনীন কোন প্রকল্প চোখে পড়ে না। আমরা মাছে ভাতে বাঙালি হলেও নিজের ধানের চাউল ও নিজের পুকুরের মাছ দিয়ে কয়জন তিন বেলা খাবার খেতে পারি,তার হিসাব করলেই আমরা কতটুকু পরনির্ভরশীল তা সহজে বের করে আনা সম্ভব।

মাথাপিছু ৬৫ হাজার করে ঋনের বোঁঝা নিয়ে আমরা পথ চলছি। সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে আরো কত ঋন বৃদ্ধি পায় তা আঁচ করা মুশকিল। উন্নয়নের জন্য বিদেশি ঋনের প্রতি না ঝুঁকে নিজের টাকায় যতদূর সম্ভব অগ্রসর হওয়া উত্তম। আসুন আমরা সবাই মিলে আমাদের দুই হাতকে কাজে লাগাই এবং পরনির্ভরতা মুক্ত বাংলাদেশ গড়ি।

লেখক : শিল্প উদ্যোক্তা ও সদস্য, ডিইউজে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!