দৈনিক ফেনীর সময়

ফেনীতে তোতলামি সারাতে থেরাপী দেন টেকনেশিয়ান

আরিফ আজম :

ফেনীতে প্রতিবন্ধীদের বিনামূল্যে সেবা দিতে ২০১৩ সালে প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র চালু করা হয়। জনবল সংকটে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে সমাজকলাণ মন্ত্রণালয় এর জনহিতকর প্রতিষ্ঠানটি। এখানে ঠিকমতো কথা বলতে না পারা এমনকি জিভের আড়ষ্টতা তথা তোতলামি সারানোর ক্লিনিক্যাল স্পিচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট পদ শূন্য রয়েছে বছরের পর বছর। এর প্রেক্ষিতে টেকনেশিয়ানকে প্রশিক্ষণ দিয়ে সেবা দেয়া হচ্ছে। যার ফলে পর্যাপ্ত সেবা না পেয়ে বিপাকে পড়ে ঢাকা-চট্টগ্রামমুখী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছুটতে হয়।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, শহরের ফেনী জেনারেল হাসপাতাল সংলগ্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সম্মুখস্ত স্থানে একটি ভাড়া ভবনে রয়েছে প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র। এখানে প্রতিবন্ধিতার ধরণ নির্ণয়, ফিজিওথেরাপী, স্পিচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপী, অকুপেশনাল থেরাপী, অটিজম বিষয়ক সেবা, কাউন্সিলিং সেবা, শ্রবণ ও দৃষ্টি সংক্রান্ত সেবা, সহায়ক উপকরণ বিতরণ, সচেতনতা কার্যক্রম, পূণর্বাসন, পক্ষাঘাতগ্রস্তদের সেবা ও মোবাইল থেরাপী ভ্যান সার্ভিস দেয়া হয়। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখানে ২০ হাজারের বেশি বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ ও শিশু সেবা নিয়েছেন। বর্তমানে শুধুমাত্র সাড়ে ৪ হাজার সেবা গ্রহীতা স্পিচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপী গ্রহণ করেন। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত অন্তত ৫০ জন এ সেবা নিয়ে থাকেন। ক্লিনিক্যাল স্পিচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট পদ শূন্য থাকায় টেকনেশিয়ান মোর্শেদ কামাল মাসুদকে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সি.এম.এইচ) এর বিশেষায়িত সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রয়াস থেকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্লিনিক্যাল স্পিচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট কোর্স সম্পন্ন করেন টেকনিশিয়ান-২ মো: শাহআলম। তারা দু’জনই এ সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

অবশ্য এ সেবার সুফল পেয়ে খুশি অনেক অভিভাবক। তাদের মতে, জন্মের পর অনেক সন্তানের জিভে আড়ষ্টতা থাকে। ঠিকভাবে কথা বলতে পারতো না। কথা বলতে গিয়ে নার্ভাস হওয়ার কারনে তোতলামি করতে হয়।

সেখানে কথা হয় শহরতলীর লালপোল এলাকার বাসিন্দা জান্নাতুল ফেরদৌসের সঙ্গে। তার কোলে রয়েছে ২২ মাস বয়সী শিশু মিফতাহুল জান্নাত। ফেনীর সময় কে জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, তার মেয়ে জন্মের পর ভালোভাবে কথা বলতে পারেনা। গত মাসখানেক আগে মেয়েকে স্পিচ ও ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপী দিতে প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রে ভর্তি করি। স্বামী ওমান প্রবাসে থাকায় নিয়মিত আসতে পারেন না। মেয়ের জন্মগত অসুস্থতার জন্য স্বজন ও প্রতিবেশী অনেকে নানা বিদ্রুপাত্মক মন্তব্য করেন।

তার আশা, মিফতাহুল জান্নাতকে ইতিমধ্যে ৪দিন থেরাপী দেয়া হয়েছে। নিয়মিত থেরাপী পেলে তার মেয়ে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠবে।

দাগনভূঞা উপজেলার জায়লস্কর ইউনিয়নের এনায়েতপুর গ্রামের আমজাদ হোসেন ফেনীর সময় কে জানান, জন্মের পর তার শিশু সন্তান আবদুর রহমান কথা বলতে পারত না। একাধিক ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সুফল পাইনি। এরপর প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রে স্পিচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি ও ফিজিওথেরাপী নিতে ভর্তি করি। এখানে ৪ মাস ধরে স্পিচ ও ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি ও ফিজিওথেরাপী দিয়ে থাকি। আগে এক শব্দ-দুই শব্দ কথা বলতো। এখন পুরো বাক্য বলতে পারে। আশা করছি ভবিষ্যতে আরো বলতে ও চলতে পারবে।

ফুলগাজী উপজেলার দক্ষিণ বরইয়া মারকাযুল উলুম মাদরাসার শিক্ষক আরিফুল ইসলাম ফেনীর সময় কে জানান, দীর্ঘ ৭-৮ মাস ছেলেকে থেরাপী দেয়ার পর উন্নতি হয়েছে। তবে স্পিচ এন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিষ্ট নিয়োগ দেয়া হলে সেবার মান আরো বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।

ফেনী জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা আবুল হোসাইন মোহাম্মদ উল্যাহ মাহমুদ ফেনীর সময় কে জানান, জেলা প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রে ১৩টি পদের মধ্যে দীর্ঘদিন ৫টি পদ শূন্য রয়েছে। এসব পদ পূরণ হলে সেবার গতি আরো বাড়বে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!