দৈনিক ফেনীর সময়

সংবাদপত্র : পাঠকের প্রত্যাশা

সংবাদপত্র : পাঠকের প্রত্যাশা

প্রফেসর তায়বুল হক

বয়স, পেশা, গোষ্ঠী, সম্প্রদায় ইত্যাদি দৃষ্টিকোণ থেকে সংবাদপত্রের পাঠক বিভিন্ন শ্রেণীভুক্ত। এই সকল শ্রেণীর দৃষ্টিভঙ্গি ও ভিন্ন ভিন্ন। সদ্য সংবাদপত্র পড়তে পারা একটি শিশু পত্রিকা হাতে পেলে ছবি দেখে, ছড়া ও শিশুদের জন্য আঁকা কার্টুনগুলি দেখে পড়ে। একজন হতাশ বেকার যুবক হন্যে হয়ে খোঁজে চাকুরীর বিজ্ঞাপন, শেয়ার মার্কেটের ব্যবসায়ী অন্যের নিকট থেকে পত্রিকা চেয়ে নিয়ে মার্কেটের হালহকিকত জানার ঐ পৃষ্ঠাটি হন্যে হয়ে খোঁজে। রাজনৈতিক দলের একনিষ্ঠ কর্মী তার নেতানেত্রীর ছবি ও খবর খোঁজে। একজন পরিণত বয়স্ক পাঠক গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ, আন্তর্জাতিক সংবাদ, ফিচার এবং বিশ্লেষণধর্মী লেখাগুলি প্রথম পড়ে। খেলা পাগল ব্যক্তি খোঁজে শচিন সর্বশেষ কোন রেকর্ডটি করল, বোল্টের সর্বশেষ টাইমিং কত, সেরেনা কততম গ্রান্ডগøাস জিতল, মেসি রোনাল্ডো দ্বৈরথে কে এগিয়ে ইত্যাদি খবরাখবর। আর রূপালী ঢালিউড, টালিউড, বলিউড, হলিউডের সচিত্র খবরের জন্য তো প্রায় সবাই আগ্রহী থাকে। এইভাবে পত্রিকার বিভিন্ন শ্রেণীর পাঠক সংবাদপত্র থেকে তার প্রত্যাশিত বিষয়ের সংবাদটি প্রথমে খুঁজে বের করে পড়তে চায়। একটি সংবাদপত্রের নিকট পাঠকের প্রত্যাশা বিচিত্র ও বহুমুখী। সংবাদপত্র সকলের সব প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে এমন কিন্তু নয়। তাই সংবাদপত্রকে সর্বত্রগামী না হতে পারলেও বিচিত্র না হতে পারলেও বিচিত্র পথে যেতে হয় পাঠক প্রত্যাশা পুরণের জন্য। পাঠক প্রত্যাশাও পরিবর্তনশীল। পাঠকের বয়স, সামাজিক অবস্থান, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন, রাজনৈতিক, রাষ্ট্রীয়, আন্তর্জাতিক পটপরিবর্তনের সাথে সাথে পাঠক চাহিদাও পরিবর্তন হয়। পরিবর্তনশীল প্রত্যাশার সাথে যে পত্রিকা তাল মিলিয়ে চলতে পারে সেই পত্রিকা ধাপে ধাপে উন্নতি লাভ করে এবং প্রচার সংখ্যা ঈর্ষনীয় পর্যায়ে নিতে পারে। পাঠক প্রত্যাশা পুরণে ব্যর্থ কোন পত্রিকা দীর্ঘ সমযয়টিকে থাকতে পারে না। পাকিস্থান আমলে পূর্বপাকিস্থানে দৈনিক ইত্তেফাক’ তখনকার পাঠকের প্রত্যাশাকে ধারণ এবং বহন করেছিল বলে ‘ইত্তেফাক’ একটি প্রতিষ্ঠানে এবং ইত্তেফাক সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া এক কিংবদন্তীতে পরিণত হয়েছিলেন। অনুরূপভাবে মরহুম আবদুস সালাম, মরহুম জহুর হোসেন চৌধুরীর স্মৃতি আজও পাঠকের হৃদয়ে উচ্চতম শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্ঠিত কিংবদন্তী সম্পাদক হিসেবে। সংবাদপত্রকে সমাজের দর্পন, তৃতীয় নয়ন, চতুর্থ রাষ্ট্র ইত্যাদি অভিধায় আখ্যায়িত করা হয়। দর্পনের সামনে দাঁড়িয়ে মানুষ অবিকৃতভাবে নিজের অবয়ব দেখতে পায়। তেমনি সংবাদপত্রেও পাঠক সমাজের এবং রাষ্ট্রের অবিকৃত, প্রকৃত, বস্তুনিষ্ঠ রূপ অবলোকন করতে চায়। সম্পাদক এবং সাংবাদিকের দায়িত্ব হলো নির্মোহভাবে প্রকৃত এবং সম্পূর্ণ সত্যকে পত্রিকার পাতায় তুলে ধরা। আজকের তথ্য প্রযুক্তির উন্নতি, অবাধ তথ্য প্রবাহ এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার দ্রæত প্রসারে পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে ঘটে যাওয়া ঘটনা সবাই তাৎক্ষনিক জানছে এবং দেখছে। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় দেখা ঘটনার সাথে প্রিন্ট মিডিয়ায় অর্থাৎ সংবাদপত্রে ছাপানো বর্ণনার যদি = বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয় তবে পাঠক সংবাদপত্রের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলে। তাই সংবাদপত্র অবশ্যই বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করবে ইহা পাঠকের অন্যতম প্রত্যাশা। ১ সংবাদপত্র পাঠকের জ্ঞানের প্রসার ঘটায়। অজ্ঞানতা, অজ্ঞতা দূর করতে সহায়তা করে। সভ্যতার পথে, প্রগতির পথে, উন্নতির পথে সমাজ, রাষ্ট্রের যাত্রাপথে সংবাদপত্র সহায়ক শক্তির ভূমিকা পালন করে। সংবাদপত্রের যাত্রা শুরুর সূচনা লগ্ন থেকে অদ্যাবধি দুনিয়াব্যাপী সংবাদপত্র সমাজ কল্যাণে এই অবশ্য পালনীয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। সমাজের পক্ষে, জনগনের পক্ষে ক্ষতিকর, প্রগতির পথে, আলোর পথে, ন্যায়ের পথে, সভ্যতা ও অগ্রগতির পথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করতে পারে এমন কোন সংবাদ, ফিচার, প্রবন্ধ, মতামত সংবাদপত্রে প্রকাশ না করাই কাম্য। সমাজের বা দেশের বিভিন্ন গোষ্ঠীর (ধর্মীয় বা নৃতাত্বিক) মধ্যে সৌহার্দ, ভ্রাতৃত্ব, শ্রদ্ধাবোধ সৃষ্টিতে সংবাদপত্র যেমন উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারে তেমনি এই সকল ক্ষেত্রে নেতিবাচক ভূমিকাও পালন করতে পারে। লজ্জাজনক হলেও সত্য যে বহুবার এবং বহু ক্ষেত্রে আমাদের দেশে এবং পৃথিবীর অন্যান্য দেশের কিছু সংবাদপত্র (তা যত মুষ্ঠিমেয় সংখ্যক হোক না কেন) এই সকল ক্ষেত্রে নেতিবাচক ভূমিকা পালন করছে।

পাকিস্থান আমলে এবং বাংলাদেশ আমলেও কিছু সংবাদপত্র উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এমন সংবাদ পরিবেশন করেছে যাতে করে বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে হানাহানির অবস্থা সৃষ্টি হয়। এই রূপ ক্ষেত্রে সমাজে হানাহানি, অশান্তি বৃদ্ধি পায় এবং দীর্ঘ মেয়াদী এই অশান্ত পরিবেশ বজায় থাকার কারণে গোটা অঞ্চলে অর্থনৈতিক উন্নয়নই শুধু ব্যহত হয় না অনেক ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্পর্কেরও অবনতি ঘটে। মানুষ মানুষের বন্ধুর পরিবর্তে শত্রুতে রূপান্তরীত হয়। দায়িত্বশীল সংবাদপত্রকে এরূপ নেতিবাচক ও ক্ষতিকর সংবাদ প্রকাশ থেকে অবশ্যই বিরত থাকা উচিত। অনেক সময় দেখা যায় সংবাদপত্র মালিক, ব্যক্তি, গোষ্ঠি বা রাজনৈতিক এবং বৈদেশিক কোন শক্তির স্বার্থ রক্ষায় ভূমিকা পালন করে। ইহা সংবাদপত্রের জন্য অত্যন্ত কলংকজনক। মালিকের ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষা বা রাজনৈতিক উচ্ছাভিলাস পূরণে সংবাদপত্র ব্যবহৃত হইলে তখন ঐ সংবাদপত্র আর নৈতিক মান বজায় রাখতে পারেনা এবং তখন পাঠক সমাজও সংবাদপত্র হইতে মুখ ফিরিয়ে নেয়। অনেক সময় কোন বহুমাত্রিক কোম্পানীর স্বার্থ বা কোন বৈদেশিক সরকারের বিশেষ কোন স্বার্থের পক্ষেও সংবাদপত্র অবস্থান গ্রহণ করে ইহাও কখনও কাম্য নয়। আমাদের দেশে এবং পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও রাজনৈতিক মতাদর্শ বা বিশেষ রাজনৈতিক দলের সমর্থক অনেক সংবাদপত্র প্রকাশিত হয়। ইহা অনাকাঙ্খিত নয়। কিন্তু রাজনৈতিক মতাদর্শ বা দলের সমর্থক হয়ে কোন সংবাদপত্র যদি বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে, প্রগতির বিরুদ্ধে, কল্যাণের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহন করে এবং মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করে বা এমন সংবাদ পরিবেশন করে যাহার ফলে দেশে হানাহানি ও অশান্তির সৃষ্টি হইতে পারে তবে এরূপ সংবাদপত্র কাম্য নয়। অস্তিত্ব রক্ষার জন্য অনেক সময় সংবাদপত্রকে সরকারি বিজ্ঞাপনের উপর নির্ভরশীল হতে হয়। তখন সরকার বিভিন্নভাবে পত্রিকা নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করে। অনেক সময় অজানা উৎস হইতে পত্রিকা অর্থ সহায়তা পায় যাহা সংবাদপত্রের স্বাধীন পথ চলার ক্ষেত্রে অন্তরায় হিসাবে কাজ করে। যেকোন মূল্যে সংবাদপত্র যত স্বাধীনতা বজায় রেখে অবিচলভাবে সত্যনিষ্ঠ, নিরপেক্ষ এবং সাংবাদিকতার নৈতিকতা ও মান বজায় রাখতে পারবে পাঠক ঐ পত্রিকা তত বেশী গ্রহণ করবে। স্ব-নিয়ন্ত্রন সংবাদপত্রের জন্য একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ নীতি। দেশ, জাতি বা অন্য কোন বৃহত্তর স্বার্থে অনেক সময় সংবাদপত্রকে বিশেষ বিশেষ খবর ছাপানো হইতে বিরত থাকতে হয়। এই ক্ষেত্রে সরকার বা অন্য কোন সংস্থা পত্রিকাকে নিয়ন্ত্রন করেনা পত্রিকা নিজেই নিজের নৈতিকতা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। প্রত্যেক সংবাদপত্রেরই স্ব নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা থাকা উচিত। পৃথিবীর নাম ঝরা সংবাদপত্রগুলি এই নীতি মেনে চলে, দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হইতে পারে, দেশের স্বার্থ বিঘ্নিত হইতে পারে এমন সংবাদ প্রকাশ থেকে বৃহত্তর স্বার্থে বিরত থাকা সংবাদপত্রের নীতিমালা হওয়া উচিত। সঠিক তথ্য হওয়া। তথ্য সংগ্রহ না করে ভাসা ভাসা তথ্যের উপর নির্ভর করে বা অ নির্ভরযোগ্য তথ্য থেকে খবর সংগ্রহ করে তা না ছাপানো সংবাদপত্রের জন্য উত্তম। কোন ব্যক্তির সুনাম ক্ষুন্ন হইতে পারে বা ব্যক্তির একান্ত কোন গোপন পারিবারিক বিষয় প্রকাশিত হইতে পারে এমন খবর প্রকাশ থেকে সংবাদপত্রের বিরত থাকা উচিত। বিজ্ঞাপন ছাড়া সংবাদপত্রের প্রকাশনা প্রায় অসম্ভব। অনেক সময় দেখা যায় সংবাদপত্র এমন সব বিজ্ঞাপন প্রকাশ করে যা খুব স্থুল ভাবে অশ্লীল, কুরুচিপূর্ণ। সামাজিক দৃষ্টিকোন থেকে এইরূপ বিজ্ঞাপন ছাপানো পরিহার করা উচিত। অন্যদিকে অনেক সময় পত্রিকার প্রথম এবং শেষ পৃষ্ঠায় বিজ্ঞাপনের এমন আধিক্য থাকে যে দু’তিন লাইন পড়েই পাঠককে পৃষ্ঠান্তরে যেতে হয়- ইহা অত্যন্ত বিরক্তিকর। বিজ্ঞাপনই যদি পত্রিকার গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে তবে খবরের গুরুত্ব কোথায়? তাই বিজ্ঞাপন ছাপানোর ক্ষেত্রেও পত্রিকাগুলোতে এমন ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে যাবে পাঠকের বিরক্তি উদ্রেক না করে। সকালের খবরগুলি পত্রিকায় যথাযথভাবে গুরুত্ব পাওয়া উচিত। আমাদের দেশের বৃহত্তর সমস্যাগুলি তৃণমূলের সাথে জড়িত এবং মফস্বল সংবাদে তৃণমূল মানুষের সমস্যা, আশা-আকাংখা ও সম্ভাবনার কথাই উঠে আসে। তৃণমূলের সমস্যা সঠিক উঠে আসলে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে এ সমস্যার মোকাবেলা সঠিক পথে ও সহজে সমাধান করা সম্ভব। বাংলাদেশ এখনও একটি বৃহৎ গ্রাম প্রায়। এক অঞ্চলের সমস্যার সাথে অন্য অঞ্চলের সমস্যার ধারাও প্রায় অভিন্ন। রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে ও বাস্তবায়নে তৃণমূলের সাংবাদিকগন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারেন। অকাল প্রয়াত চারণ সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দিন যিনি মফস্বল সাংবাদিকতাকে অনেক উঁচুস্তরে নিয়ে গিয়েছিলেন যাঁর প্রতিবেদন পড়তে পড়তে আমরা ভবদেহের ভাগ্যাহত জনগোষ্ঠীর সাথে একাত্ম হয়ে যেতাম- যিনি সমস্যা তুলে ধরে প্রতিকারের পথও বাতলে দিতেন তেমন শক্তিশালী নির্ভিক প্রতিবেদন ও প্রতিবেদক সৃষ্টি হলে সংবাদপত্রে পাঠক অবশ্যই তাদের প্রত্যাশিত বিষয়াগুলি দেখতে পাবে। সরকারি এবং সরকার বিরোধী অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কর্মকান্ডের বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ, সমালোচনা পত্রিকা যেমন করবে তেমনি সরকারের উল্লেখযোগ্য সাফল্যের চিত্র তুলে ধরবে। শুধু সমালোচনার জন্য সমালোচনা না করে সম্ভাব্য সমাধানের উপায়ও বাতলে দিবে। সংবাদপত্র সঠিকভাবে সামগ্রিক চিত্র যত বেশী করে উপস্থাপন করতে পারবে সরকার ততবেশী সচেতন হবে এবং জনকল্যাণগামী কাজে ব্রতী হবে এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলও তাদের ভুলভ্রান্তি দুর করতে আগ্রহী হবে। বিষয় বিশেষজ্ঞদের মতামত, সাক্ষাৎকার, লেখা ছাপিয়ে সংবাদপত্র স্থানীয় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পাঠকের জানার সীমাবৃদ্ধি ও প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে ওয়াকেবহাল করতে পারে। ইদানিং পত্রপত্রিকায় স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি, কৃষি বিষয়ক ফিচার, তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়ন প্রভৃতি ক্ষেত্রে নানা তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করে সমাজ সচেতনতা বুদ্ধিতে যে অবদান রাখছে তা অবশ্যই প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। অনেক সংবাদপত্র জাতীয় নানা দুর্যোগে ভাগ্যাহতদের সহায়তার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করে যা সামাজিক দায়বদ্ধতা পালনের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। শরীর অথচ মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে দাঁড়নো, জীবনে প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তাদেরকে সহায়তা দেওয়া, মেধাবীদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য সংবর্ধনা দেওয়া প্রভৃতি সংবাদপত্রের সামাজিক দায়িত্ব পালন। এই সকল কাজের জন্য সংবাদপত্র সকলের প্রশংসা পাওয়ার দাবী রাখে। সংবাদপত্রের সাথে সাংবাদিকের নাম ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। সমাজের সব পেশাই মহৎ এবং সম্মানের। তার মধ্যেও কিছু কিছু পেশা অতি সম্মানের। অতি সম্মানের পেশার মধ্যে সাংবাদিকতাও অন্যতম একটি। এ পেশাকে মানুষ শ্রদ্ধার চোখে দেখে। আপদে বিপদে পরিত্রাণেরও প্রতিকারের আশায় এদের কাছে ছুটে যায় মানুষ আশ্রয় পেতে চায়। সাংবাদিককে তার কার্যকলাপের দ্বারা সমাজে তার এই সম্মানিত স্থান অর্জন করতে হয়। সাংবাদিক তার পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক সময় কঠিন বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। অনেক সময় শারীরিক আক্রমনের মুখোমুখি হয়ে মৃত্যুবরণও করতে হয়। রাষ্ট্রীয় রোষানলে পড়ে অনেকের নির্যাতিত হওয়ার ঘটনা ভুরিভুরি। উন্নত বা অনুন্নত, গণতান্ত্রিক বা স্বৈরাচারী সব রাষ্ট্রেই এরকম ঘটনা ঘটে। তবুও পেশার প্রতি নিষ্ঠাবান আদর্শ সাংবাদিক জীবন মৃত্যুকে পায়ের ভূতা মনে পেশাগত দায়িত্ব পালন করে যান। এই সকল সাংবাদিক প্রতি স্মরণীয়। তাদের অবদানে সাংবাদিক সমাজ সম্মানিত বিশ্বের দেশে দেশে তারা নন্দিত। আমরা পাঠক সমাজ আদর্শবান, নিষ্ঠাবান এবং পেশাগত দায়িত্ব পালনে অকুতোভয় সাংবাদিক দেখতে চাই। ‘হলুদ সাংবাদিকতা’ বর্তমানে বহুল উচ্চারিত একটি শব্দ। কোন সাংবাদিক বা সংবাদপত্র যখন সাংবাদিকতার নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে বাক্তিগত অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী হয়ে অথবা ব্যক্তি বা গোষ্ঠিগত স্বার্থে বা নিজের সুবিধা লাভের উদ্দেশ্যে উদ্দেশ্য প্রণোদিত, বিকৃত, যুগ তথ্য সম্বলিত বা মান হানিকর খবর প্রকাশ করে তাহাই হলুদ সাংবাদিকতা। সাংবাদিকতার মহৎ পেশাকে দু’একজন ‘হলুদ সাংবাদিক হেয় করে প্রশ্নবিদ্ধ করে। সাংবাদিক সমাজ নিজেদের সম্মান এবং পেশাগত ইমেজ রক্ষার্থে হলুদ সাংবাদিকতা’র বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন- ইহাও পাঠক প্রত্যাশা।

লেখক : উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত), ফেনী ইউনিভার্সিটি ও
প্রাক্তণ অধ্যক্ষ, ফেনী সরকারি কলেজ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!