আবুল খায়ের টিটু
কর্মস্থলের মাধ্যমে ফেনীর সময়ের সাথে আমার যোগসূত্র। ২০১৩ সালে ফেনী ইউনিভার্সিটির প্রথম দিনের একজন শিক্ষক হিসেবে কাজ শুরু করি। তখনকার ছোট অবয়বের বিশ^বিদ্যালয়ের সকল খবর সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আমরা গণমাধ্যমে প্রেরণ করতাম। ইউনিভার্সিটির তৎকালীন জনসংযোগ কর্মকর্তাকে সহযোগিতা করতে মাঝে মাঝে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি তৈরি করতাম এবং ইমেইলে তা প্রেরণ করতাম। এ সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেখার সূত্রে ক্রমে ফেনীর সময়ের নিয়মিত পাঠক হয়ে উঠি আমি। পরবর্তীতে ফেনীর সময়ের একটি সৌজন্য কপি আমার টেবিলেও পৌঁছাতো। ধীরে ধীরে পাঠকের পাশাপাশি ফেনীর সময়ের একজন অনিয়মিত লেখক হয়ে যাই আমি। ২০১৯ সালে সুইডেনের উদ্দেশ্যে দেশ ত্যাগের পর পত্রিকাটির ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইট নিয়মিত অনুসরণ করি। করোনাকালে পত্রিকাটি আয়োজিত টক শো এর একটি পর্বে সুইডেন থেকে আলোচক হিসেবে যুক্ত হওয়ার সুযোগ হয় অন্তর্জালে। পত্রিকাটির সাথে যোগসূত্র স্থাপন হয় এর সুযোগ্য সম্পাদকের মাধ্যমে। একাডেমিক এক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে শাহাদাত ভাইয়ের সাথে পরিচয়। সেই থেকে আমাদের অনিয়মিত কিন্তু আত্মিক যোগাযোগ। ছোট্ট একটি জেলা শহরে নিয়মিতভাবে একটি দৈনিক বের করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। এ মুশকিল কাজটি ধৈর্য এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমে সফলতার সাথে করে যাওয়ার জন্য শাহাদাত ভাই এবং তাঁর পুরো দল অভিনন্দন প্রাপ্য।
ফেনীর সময়ের সফলতার পেছনে বহু কারণ আলোচিত হতে পারে। তবে আমার বিবেচনায় দুটো বিষয় উপরের দিকে। প্রথমত ধারাবাহিকতা, দ্বিতীয়ত বিষয়বস্তু। ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়ে ফেনীর সময় পাঠকের মনের ক্ষুধা পূরণ করতে পেরেছে বলে আমার মনে হয়। আর বৈচিত্র্যময় বিষয়বস্তু পাঠকের মনে সন্তুষ্টি আনতে পেরেছে। বিষয়বস্তু (কনটেন্ট) নির্বাচনে ফেনীর সময়ে জেলা সদরের পাশাপাশি গুরুত্ব পায় প্রান্তিক সম্ভাবনা ও সমস্যা। মফস্বল শহরের প্রান্তে বিরাজমান সমস্যাগুলোও চিত্রায়িত হয় অধিক গুরুত্বের সাথে। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক খবর ও বিশ্লেষণ ফেনীর সময়ে বাড়তি পাওনা।
এবার ফেনীর সময়ের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সম্পর্কে একটু আলোকপাত করা যাক। ভার্চুয়াল জগৎ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আবির্ভাব এবং ক্রমবিকাশের কারণে ছাপা গণমাধ্যমের ভবিষ্যৎ নিয়ে বহু চিন্তক উদ্বিগ্ন। ছাপা কাগজের পত্রিকা বন্ধ হয়ে যাবে কি না এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে পুরো দুনিয়ায়। ছাপা কাগজ একেবারে বন্ধ হওয়া প্রায় অসম্ভব। বন্ধ না হলেও ডিজিটাল কন্টেন্টের প্রতিযোগিতায় ছাপা কাগজের চাহিদা কিছুটা হলেও মৃয়মান। ডিজিটাল কনটেন্টই যদি অগ্রাধিকার পায়, তাহলে ফেনীর সময়ের মতো পত্রিকাগুলোর জন্য প্রতিযোগিতা জেলা শহরে সীমাবদ্ধ নেই বা থাকবে না। তখন (বা এখনই) ফেনীর সময়কে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে হবে (বা হচ্ছে) জাতীয় পর্যায়ের বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের গণমাধ্যমের সাথে। পাঠক-শ্রোতা-দর্শক জাতীয় মানেই বা আন্তর্জাতিক মানেই চাইবে মফস্বলের খবর বা বিষয়বস্তু প্রচার। এ কারণে বলা যায়, ছাপার পাশাপাশি অধিকতরভাবে ডিজিটাল মাধ্যমই সংবাদপত্র শিল্পের ভবিষ্যৎ। ফেনীর সময়কে আগামীর এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ডিজিটালাইজেশনে গুরুত্ব দিতে হবে। যে ওয়েবসাইটটি আছে তার পাশাপাশি ইপেপার প্রকাশ এখনই করতে হবে। ইপেপারে প্রতিটি খবর আলাদা করে যেন পড়ার ব্যবস্থা থাকে সেটা দেখতে হবে। সামাজিক মাধ্যমে খবর প্রকাশ অব্যাহত রাখতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান বা ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে সরাসরি (যেমন ফেসবুক লাইভ) প্রচারিত হতে পারে। বিশেষায়িত ডিজিটাল কনটেন্ট ইউটিউব এবং সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে। ডিজিটাল কন্টেন্ট সম্পাদনায় বিশেষজ্ঞ না থাকলে নিয়োগ দিতে হবে। সম্ভব হলে সহজে ব্যবহার করা যায় এমন একটি মুঠোফোন অ্যাপও চালু করা যেতে পারে। ডিজিটালাইজেশনে মনোযোগ দিলে পত্রিকার খরচ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। সেক্ষেত্রে পত্রিকার বর্তমান আকার পরিবর্তন করে ট্যাবলয়েড আকার করে কিছু খরচ কমানো যেতে পারে। এতে সপ্তাহে দুদিন এক পাতার, এক রঙা ট্যাবলয়েড বের হতে পারে। ছাপার কাগজে বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেও বিজ্ঞাপন সংগ্রহে মনোযোগ দিতে হবে। সাম্প্রতিক প্রতিযোগিতায় খরচ না কমালে টিকে থাকা মুশকিল হবে। খরচ কমাতে গিয়ে যেন মানের সাথে সমঝোতা করা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমে কাজ করা আমার এক বন্ধু সাংবাদিক তার একটি সংবাদ প্রকাশের পর সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সমালোচনার শিকার হন। শুভাকাক্সক্ষী হিসেবে ঐ বন্ধু আমার কাছে জানতে চাইলেন উনি কি কোন ভুল করেছেন? আমি জানতে চাইলাম যে উনি যা পরিবেশন করেছেন, তা সত্য কি না? তিনি বললেন তা সত্য। আমি বললাম তাহলে আর এটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। সংবাদটি সত্য কি না তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই সত্য প্রকাশই গণমাধ্যমের সবচেয়ে বড় দায়বদ্ধতা। একজন পাঠক হিসেবে আমি গণমাধ্যমে সত্য প্রকাশ দেখতে চাই। ফেনীর সময় নির্ভীকভাবে সবসময় সত্য প্রকাশ করে যাবে, এ প্রত্যাশা। ফেনীর সময়ের তেরো বছর পূর্তিতে আমার প্রাণঢালা অভিনন্দন। চৌদ্দ বছরের পথচলা সুগম হোক।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক (মার্কেটিং)
শিক্ষা ছুটিরত, ফেনী ইউনিভার্সিটি।