দৈনিক ফেনীর সময়

পরশুরামের মুহুরী নদীতে ফ্রি স্টাইলে বালু লুটের মহোৎসব

পরশুরামের মুহুরী নদীতে ফ্রি স্টাইলে বালু লুটের মহোৎসব

আরিফ আজম, পরশুরাম থেকে ফিরে :

পরশুরাম পৌর শহরের ১নং ওয়ার্ড খন্দকিয়া ও দুবলার চাঁদ। ওই এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া মুহুরী নদী দেখলে বোঝার উপার নেই যে এখানে বালু তোলা হচ্ছে। অথচ তার বিপরীত পাশেই চলছে বালু লুটের মহোৎসব। সেখানে মাটি কেটে বসানো হয়েছে তিনটি ড্রেজার। এ অবস্থা শুধু পৌর শহরেই নয়, তৎসংলগ্ন মির্জানগর ইউনিয়নের কাউতলী এলাকায় বালু লুটের চিত্র আরো ভয়াবহ। বছরের পর বছর চললেও প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তাব্যক্তিদের নজরে পড়েনি এ সর্বনাশা চিত্র। গতকাল সোমবার সরেজমিন ঘুরে এসব দৃশ্য দেখা গেছে।

কাউতলীতে গিয়ে দেখা যায়, বেড়িবাঁধের উপর দিয়ে দিবারাত্রি বালুর টাক চলাচল করছে। ফলে বেড়িবাঁধ খানাখন্দকে ভরে গেছে। ওই সড়কের পাশে আলী হোসেন মজুমদার বাড়ি সম্মুখস্ত স্থান সহ আশপাশের কয়েকটি স্পটে নদী থেকে দূরবর্তী স্থানে মাটি কেটে বালুমহাল তৈরি করা হয়েছে। দেখলে যে কারো বোঝার উপার নেই এটি নদী। যার ফলে মুহুরী নদীর চিরচেনা রূপ বদলে গেছে। প্রতিদিন অবৈধভাবে তোলা বালু মিনি ট্রাকে করে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

আলী হোসেন মজুমদার বাড়ি সম্মুখস্ত স্থানে বালুর পাহারাদারের সাথে কথা হয়। নাম প্রকাশ না করেই তিনি বলেন, “বালুর ব্যাপারে জানতে পাশ^বর্তী একটি দোকান দেখিয়ে দেন। সেখানে কয়েকজন ব্যক্তি সার্বক্ষনিক বসা থাকেন। তারা বালু তোলা ও বিক্রির ব্যাপারে বলতে পারবেন।”

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত রয়েছে শক্তিশালী একটি চক্র। এ কারণে স্থানীয়রা প্রকাশ্যে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পান না। শুধু তাই নয়, বালু উত্তোলনে জড়িতরা চাইলে নদীর পাশের যে কারো জমি থেকে স্কেভেটর দিয়ে মাটি কেটে বিক্রি করেন। এরপর ওই জমিতেই ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করেন। স্থানীয়ভাবে এই চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক একরামুল হক চৌধুরী পিয়াস, ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক শাহআলম সোহাগ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হান্নান, তাদের সহযোগি এমাম হোসেন।

দক্ষিন কাউতলী এলাকার স্থানীয় মেম্বার ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম-আহবায়ক ফজলুল বারী মনছুর জানান, ‘বালু উত্তোলন দীর্ঘদিন চললেও কোন প্রতিকার নেই। সব বিষয়ে প্রতিবাদও করা যায়না।’

পৌরসভার কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মান্নান লিটন এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি।

অভিযুক্ত একরামুল হক চৌধুরী পিয়াস জানান, “আমার কোন বালু ঘাটও নাই, মেশিনও নাই। পরশুরামে বালু মহালের ইজারাদার শাপলা ট্রেডার্স। তাদের মাধ্যমেই বালু উত্তোলন হচ্ছে। আমি বালু সংক্রান্ত কোন কাজে জড়িত নই।”

উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মং চিংনু মারমা ফেনীর সময় কে বলেন, ইজারার স্থান ছাড়া অন্য কোথাও বালু তোলা হচ্ছে কিনা জানা নেই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা হাবিব শাপলা ফেনীর সময় কে বলেন, মুহুরী নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তোলার বিষয়ে আমার কাছে কোন তথ্য নেই।

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার ফেনীর সময় কে বলেন, অবৈধভাবে বালু তুলতে দেয়া হবেনা। ইতিমধ্যে বালু মহাল ইজারাদারদের সাথে বৈঠক ডাকা হয়েছে। এ ব্যাপারে তথ্য পেলে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা, মামলা সহ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া রয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!