দৈনিক ফেনীর সময়

ফেনী শহরে ‘ভালোবাসার ফাঁদ’

ফেনী শহরে ‘ভালোবাসার ফাঁদ’

আরিফ আজম :

শুরুতে হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো কিংবা ম্যাসেঞ্জারে রমনীদের ছবি পাঠানো। এরপর প্রেমের অভিনয়। ক’দিন চলে কথোপকথন। একপর্যায়ে বাড়িতে ডেকে নিয়ে নগ্ন ছবি তুলে ব্লাকমেইলিং। ফেনী শহরে ‘ভালোবাসার ফাঁদ’ তৈরি করা এমন প্রতারক চক্রের সন্ধান পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অনেকে প্রতারণার শিকার হলেও লোকলজ্জার ভয়ে মুখ খুলতে চান না। এ ধরনের একটি মামলার অনুসন্ধান করতে গিয়ে প্রতারকদের সহযোগিতাকারীদের মধ্যে পুলিশ সদস্যের নামও বেরিয়ে এসেছে। এনিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, ফেনী শহরে সংঘবদ্ধ একাধিক প্রতারক চক্র রয়েছে। চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যক্তির মোবাইলে সুন্দরী নারীদের ছবি পাঠিয়ে টোপ দেয়। এরপর নাম্বারে কথোপকথনে প্রেমের অভিনয় করে বাসায় নিয়ে যান। বাকি সদস্যরা অশ্লীল ছবি তুলে জিম্মি করে টাকা আদায় করে। শহরের নাজির রোড, পাগলা মিয়া সড়ক, পাঠানবাড়ী সড়ক, পুরাতন পুলিশ কোয়ার্টার এলাকা এ ধরনের কয়েকটি বাসা থাকলেও চক্রের সদস্যরা কিছুদিন পরপর বাসা পরিবর্তন করে। এ চক্রের সদস্যদের মধ্যে ফেনী সদরের ফাজিলপুর-ছনুয়া এলাকার আবুল কাসেম জুয়েল, সুন্দরপুর এলাকার জেবু প্রকাশ রূপা, দাগনভূঞার ইয়াকুবপুর ইউনিয়নের দুধমুখা এলাকার বাসিন্দা শিমুল দাস, রাজু, জনি, আয়ু, বিবি রহিমা, দীপ্ত, জুয়েলের স্ত্রী রিমা আক্তার, সাথী, তার ভাই রুবেল, শিল্পী আক্তার নাম উল্লেখযোগ্য। তাদের সহযোগিতাকারী পুলিশের কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে। প্রতারক চক্রের তথ্যমতে পুলিশ অভিযানে গেলেও বাসায় প্রবেশ করতো না। বাইরে থেকেই দেনদরবার করে টাকা হাতিয়ে সরে পড়তো।

সম্প্রতি দিদার হোসেন সুমন নামে এক ব্যবসায়ী এ সংক্রান্ত একটি মামলায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তিনি মডেল থানার বিপরীতে ব্লু সুপার কার্ট জেন্টস পার্লার ও বড় বাজারের আপন স্বর্ণ জুয়েলার্সের মালিক। তার বাড়ি শহরতলীর পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের মাথিয়ারা এলাকায়।

ওই মামলা সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, পাঠানবাড়ি রোডের একটি ভবনের তৃতীয় তলার বাসায় এক ব্যক্তিকে ডেকে নেয় বিবি রহিমা। সেখানে দুইজনের নগ্ন ভিডিও ধারণ করে জুয়েল ও শিমুল। তখন ওই ব্যক্তি কোন উপায় না পেয়ে বিকাশ ও নগদ নাম্বার থেকে ৬০ হাজার দিয়ে ছাড়া পায়। ওই টাকার ভাগবাটোয়ারার মধ্যে রহিমা ও জেবুকে ২০ হাজার টাকা দিয়ে বাকি টাকা পুলিশের পকেটে ঢুকে। জহিরিয়া মসজিদের পাশের একটি বাসায় চট্টগ্রাম থেকে এক ব্যক্তি আসে। সেখানে জেমি নামে এক নারীর সাথে তার নগ্ন ভিডিও ধারন করা হয়। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ছাড়া পায়। সেখান থেকে এক পুলিশ কর্মকর্তা পান ২০ হাজার টাকা।

সূত্র আরো জানায়, একাধিক নারীকে দিয়ে চক্রটি নিয়ন্ত্রন করতো জুয়েল। একাডেমী রোডের অ্যাপলো হাসপাতাল, স্টেডিয়াম সংলগ্ন, পুরাতন রেজিষ্ট্রি অফিস সংলগ্ন স্থান সহ তার চারটি বাসা রয়েছে। এ ধরনের আরেকটি চক্রের প্রধান হলো চট্টগ্রামের জোরারগঞ্জ থানার জসিম উদ্দিনের ছেলে রাজু প্রকাশ মনির। তার চক্রের মধ্যে সাদিয়া, রাশি, মুন্নি, সালমার নাম জানা গেছে। তারা শহরের রামপুর এলাকা ও কুমিল্লা বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন তারা নিবাসের গলিতে ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করে। রাজু নামে আরেকজন পুলিশ লাইন সংলগ্ন তার বোনের বাসা থেকে অন্য একটি চক্রের নিয়ন্ত্রন করে। চলে এসব কার্যক্রম। শিপু, রুনা সহ কয়েকজন এই চক্রের সদস্য। গত ১৯ ডিসেম্বর সালাহউদ্দিন মোড় সংলগ্ন উত্তরা আবাসিক এলাকায় রুনার বাসায় দাগনভূঞা উপজেলার মাতুভূঞা ইউনিয়নের ৬০ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে ধরে ভিডিও করে। তার কাছে ২ লাখ টাকা দাবী করা হয়। ওই ব্যক্তি বাড়ি গিয়ে টাকা দেবে বলে চলে যায়।

ফেনী পৌরসভার ১৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আমির হোসেন বাহার ফেনীর সময় কে বলেন, “পুরাতন পুলিশ কোয়ার্টার কিংবা রামপুর এলাকায় বাইরের লোকজন বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। তবে এ ধরনের অপকর্মের কোন তথ্য পেলে যে বা যারাই হোক আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।”

জানতে চাইলে পুলিশ সুপার জাকির হাসান ফেনীর সময় কে বলেন, “এ ধরনের একটি চক্র ইতিমধ্যে পুলিশের নজরে রয়েছে। একজন গ্রেফতার হওয়ার পর তার কাছ থেকে বেশ কিছু তথ্য মিলেছে। তার দেয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। পুলিশের কোন সদস্য জড়িত কিনা সেটিও তদন্তাধীন রয়েছে।”

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!