দৈনিক ফেনীর সময়

মিরসরাইয়ে ট্রেন দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া আয়াতও না ফেরার দেশে

মিরসরাইয়ে ট্রেন দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া আয়াতও না ফেরার দেশে

এক সপ্তাহ পরও রিপোর্ট দেয়নি তদন্ত কমিটি

এম মাঈন উদ্দিন, মিরসরাই

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ঝরনা এলাকায় লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় বেঁচে যাওয়া মাইক্রোবাসের যাত্রী আয়াতুল ইসলাম আয়াত চিকিৎসাধীন অব¯’ায় মারা গেছে। এ নিয়ে ওই দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ জনে।

শুক্রবার (৫ আগস্ট) দুপুর দেড়টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
আয়াত হাটহাজারী উপজেলার চিকনন্ডী ইউনিয়নের খন্দকিয়া গ্রামের ৮নং ওয়ার্ডের কবির লাইনম্যানের বাড়ির আবদুস শুক্কুরের ছেলে। আবদুস শুক্কুর পেশায় অটোরিকশা চালক। আয়াত কে এস উ”চ বিদ্যালয়ের এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চমেক হাসপাতালের আইসিইউর চিকিৎসক সহযোগী অধ্যাপক ডা. প্রণয় কুমার দত্ত।

তিনি বলেন, সোমবার বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিউরো-সার্জারি বিভাগ থেকে আহত আয়াতুল ইসলাম আয়াতকে (২০) আইসিইউতে স্থানান্তর করেন চিকিৎসকরা। তার মাথায় আঘাত ছিল, মাল্টিপল ট্রমাসহ বিভিন্ন সমস্যা ছিল তার। আজ দুপুর দেড়টার দিকে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মিরসরাইয়ে ট্রেন দুর্ঘটনায় হাসপাতালে আরও ৫ জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন। এছাড়া ইমন নামে একজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

এদিকে খৈয়াছড়া ঝরনা লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসে থাকা ১১ পর্যটক নিহতের ঘটনায় এখনো তদন্ত রিপোর্ট দিতে পারেনি গঠিত দুটি তদন্ত কমিটি। ঘটনার এক সপ্তাহ পার হলেও বৃহৎভাবে তদন্তের স্বার্থে আরো সময় দেওয়া হয়েছে কমিটি দুটিকে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন।

গত ২৯ জুলাই দুর্ঘটনার পর পরই দুটি তদন্ত কমিটি করে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা দিয়েছিলেন সংশ্লিষ্টরা। পূর্ব রেলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আরমান হোসেনকে প্রধান করে একটি ও বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) আনসার আলীকে প্রধান করে আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি দুটিতে চারজন করে সদস্য রাখা হয়েছে।

গত রোববার থেকে কার্যক্রম শুরুর পর নির্ধারিত সময় অনুযায়ী গত মঙ্গলবার (০২ আগস্ট) তদন্ত শেষ হওয়ার কথা। তবে উভয় কমিটির আবেদনের প্রেক্ষিতে তদন্তের সময়সীমা আরও তিন কার্যদিবস বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। তবে মঙ্গলবারও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি দুটি কমিটি।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন শুক্রবার (৫ আগস্ট) সকালে বলেন, আগামী সপ্তাহের শুরু অথবা মাঝামাঝি সময়ে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে পারে। গঠিত কমিটিগুলো তদন্তের স্বার্থে ব্যাপকভাবে কাজ করছে। প্রত্যক্ষদর্শী, যাত্রী, স্থানীয় বাসিন্দা, আহত হয়ে যারা চিকিৎসাধীন আছে তাদের এবং রেলসংশ্লি লোকজনের বক্তব্য নিয়ে কাজ করতে সময় লাগছে। এছাড়া টেকনিক্যাল বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবে। এরপর প্রতবেদন জমা দেবে। তাড়াহুড়ো না করে সময় নিয়ে তদন্তের কথা বলা হয়েছে।

গত শুক্রবার (২৯ জুলাই) দুপুরে মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া রেললাইনে উঠে পড়া পর্যটকবাহী একটি মাইক্রোবাসকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামমুখী মহানগর প্রভাতী এক্সপ্রেস ট্রেন ধাক্কা দিয়ে টেনে হিঁচড়ে এক কিলোমিটার দুরে নিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই ১১জন মারা যান। আহত ছয়জন চমেকে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। দুর্ঘটনার সময় দায়িত্বরত গেটকিপার সাদ্দাম হোসেন ঘটনাস্থলে ছিলো না। তিনি জুমার নামাজে ছিলেন। গেটবারও ফেলা ছিলো বলে তিনি ইতমধ্যে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন। ঘটনার কয়েক ঘন্টা পরই গিটকিপার সাদ্দাম গ্রেফতার হয়ে এখন কারাগারে রয়েছেন।

দুর্ঘটনায় নিহত ১১ জনের সবাই মাইক্রোবাসের আরোহী ছিলেন। তাদের সবাই হাটহাজারী উপজেলার চিকনদন্ডী ইউনিয়নের খন্দকিয়া ও আশপাশের গ্রামের বাসিন্দা। এদের মধ্যে ৯ জন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্র। খন্দকিয়া যুগীরহাট এলাকার আরএনজে কোচিং সেন্টারের এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া বিদায়ী শিক্ষার্থীদের নিয়ে চার শিক্ষক পিকনিকের উদ্দেশ্যে খৈয়াছড়া ঝরনায় বেড়াতে গিয়েছিলেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!