দৈনিক ফেনীর সময়

সোনাগাজীতে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার প্রকোপ, গরমে বাড়ছে শিশু রোগী

সোনাগাজীতে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার প্রকোপ, গরমে বাড়ছে শিশু রোগী

নিজস্ব প্রতিনিধি :

তীব্র গরমে সোনাগাজীতে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। আক্রান্তদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা বেশি। হঠাৎ করে রোগী বেড়ে যাওয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গতকাল সোমবার ৬টি শয্যায় ভর্তি ছিল ৫০ শিশু। এসব শিশু জ্বর, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিবন্ধন বইয়ের তথ্যে দেখা গেছে, চলতি মাসে গত ২২দিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়ায় ২৬৫জন এবং নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৪৫জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া একসময়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়া-নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন এক হাজারের বেশি রোগী। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যা ছিল ২৪৫জন। নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া আক্রান্তদের প্রায় ৭৫ শতাংশ শিশু।

সোমবার দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, শিশুদের জন্য ৬টি শয্যা থাকলেও ভর্তি রয়েছেন ৫০জন। এদের মধ্যে ২৩ শিশুকে চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। শিশুদের প্রায় সবাই ১ থেকে ৮ বছর বয়সী। কয়েকজন নবজাতককেও ভর্তি করা হয়েছে। এর বাইরে নানা রোগে আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্ক রোগীরাও ভর্তি রয়েছেন। ১৯ শয্যার বিপরীতে মোট চিকিৎসা নিচ্ছেন ৮৫ জন। এর মধ্যে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রয়েছে ২০জন। পর্যাপ্ত শয্যা না থাকায় কিছু রোগী মেঝেতে, বারান্দায় ও সিঁড়িতে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিতে দেখা যায়।

সেখানে কথা হয় উপজেলার চর চান্দিয়া এলাকা থেকে তিন বছর বয়সী ছেলে ইকবাল হোসেনকে নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা নাজমা আক্তার নামে এক নারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, তীব্র গরমে গত কয়েকদিন ধরে ছেলেটির খুব জ্বর ও ডায়রিয়া। রোববার রাতে তার ডায়রিয়া বেড়ে যায়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসার পর চিকিৎসকেরা তাকে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছেন।

চর গনেশ এলাকার একবছর বয়সী শিশু জান্নাতের মা সুফিয়া বেগম বলেন, গত শনিবার রাত থেকে তাঁর মেয়ের জ্বর শুরু হয়। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। দুধ খাওয়ানোর পর বমি করতে থাকে। জ্বর-সর্দির সঙ্গে পরে ডায়রিয়াও শুরু হয়েছে। স্থানীয় ভাবে ওষুধ খাইয়ে ও কোন প্রতিকার না মেলায় গতকাল সোমবার সকালে তাকে হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসকেরা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে বলে ভর্তি করাতে বলেন। তিনি বলেন, হাসপাতালের ভেতরে সিট না থাকায় বারান্দায় বিছানা পেতে আপতত চিকিৎসা নিচ্ছেন।
একইদিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগেও দেখা যায় রোগীদের ভিড় দেখা গেছে। গতকাল সোমবার ৪৯৫ জন রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেওয়ার তথ্য নথিভুক্ত করতে দেখা যায়। চিকিৎসকেরা জানান, বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের মধ্যে অন্তত আড়াইশ বেশি ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার লক্ষণ নিয়ে এসেছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক সাদেকুল করিম বলেন, গত দুই সপ্তাহের তীব্র গরমে ঠান্ড-গরমজনিত, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া,জ্বর, সর্দি,কাশি, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় অন্তত পাঁচ হাজার রোগী হাসপাতালের বর্হিবিভাগ ও জরুরী বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। এছাড়া প্রতিদিন গড়ে ৪৫০-৬০০ জন পর্যন্ত রোগী জরুরী ও বর্হিবিভাগ থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত অন্তত ৮জনকে ভর্তি করা হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ও শিশু বিশেষজ্ঞ মো: আরমান বিন আবদুল্লাহ বলেন, ঋতু পরিবর্তনের কারণে তীব্র দাবদাহে গরম বেড়ে যাওয়ায় নানা রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে শিশুদেরকে শুস্ক স্থানে সাবধানে এবং গরম থেকে দুরে রাখাসহ সবাইকে খাবারের ক্ষেত্রে ও সাবধানতা অবলম্বনের কথা বলছেন। এছাড়া মৌসুমি ভাইরাস থেকে দুরে থাকতে সবাইকে সচেতন হতে বলেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা উৎপল দাশ বলেন, হাসপাতালে শয্যার তুলনায় প্রতিদিন অনেক বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। সংকটের মধ্যেও চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্য কর্মীরা রোগীদের সুস্থ করে তুলতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে চলছেন। শিশুদের ঠান্ডা-গরম, দূষিত পানি, বাসি খাবার থেকে দূরে রাখার পাশাপাশি সব সময় পরিচ্ছন্ন রাখার পরামর্শ দেন তিনি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!