দৈনিক ফেনীর সময়

সোনাগাজীতে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় একমাস ৯দিনে আক্রান্ত সহস্রাধিক

সোনাগাজীতে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায়  একমাস ৯দিনে আক্রান্ত সহস্রাধিক

নিজস্ব প্রতিনিধি :

সোনাগাজীতে হঠাৎ করে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার প্রকোপ বেড়ে গেছে। এপ্রিল মাসে দুই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৯০৩জন। এর মধ্যে ডায়রিয়ায় ৭৮৮জন, নিউমোনিয়ায় ১১৫জন। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩৪৩জন। বাকিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বর্হিবিভাগ ও স্থানীয় উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রসহ বিভিন্ন ক্লিনিক থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে ৭০ শতাংশ শিশু।

এছাড়া চলতি মাসে গত ৯ দিনে ডায়রিয়ায় ১৫১জন ও নিউমোনিয়ায় ৩১জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগ শিশু। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শিশুদের জন্য ৬টি শয্যা থাকলেও গতকাল মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে ৪০ শিশু হাসপাতালে ভর্তি ছিল। পরে ১৫শিশুকে চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভর্তি হওয়া শিশু রোগীদের মধ্যে ৭০ শতাংশই জ্বর, সর্দি,কাশি, শ্বাসকষ্ট, পেটব্যাথা, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছিল। ১ থেকে ৭ বছর বয়সী শিশুর পাশাপাশি ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে নবজাতকও ছিল। গত মাসে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত প্রতিদিন গড়ে হাসপাতালে শিশুসহ ১৫-২০ ভর্তি করা হয়েছে বলে চিকিৎসকেরা জানান।

মঙ্গলবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগ থেকে প্রায় ৪৫০জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে শিশুসহ প্রায় তিনশজন রোগী জ্বর, সর্দি-কাশি, মাথাব্যথা, পেটব্যাথা, শরীরব্যথা, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ার লক্ষণ নিয়ে এসেছেন। মঙ্গলবার দুপুরে ১৫ শিশুকে ছেড়ে দেওয়া হলেও বর্তমানে বিভিন্ন রোগে হাসপাতালে ২৮শিশু চিকিৎসাধীন রয়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিবন্ধন বইয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে জ্বর,সর্দি,কাশি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত প্রায় ৯০৩জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছন। এরমধ্যে ৩৪৩জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তি রোগীর মধ্যে অর্ধেকই শিশু। মঙ্গলবার দুপুরে ১৫ শিশুসহ ২৯জনকে চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেওয়া হলেও বিকেল পর্যন্ত ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ৭০জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

উপজেলার চর চান্দিয়া এলাকার বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম বলেন, সোমবার রাতে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে যান। ভোররাতে ঘুম থেকে তাঁর এক বছর বয়সী মেয়ের ডায়রিয়া শুরু হয়। পরে ওষুধ খাওয়ার পরও নিয়ন্ত্রণে না আসায় মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালে এনে ভর্তি করেছেন।

উপজেলার চর গনেশ এলাকার দেড় বছর বয়সী শিশু নুসরাত জাহানের মা ফাতেমা আক্তার বলেন, সোমবার থেকে তাঁর মেয়ের প্রচন্ড জ্বর শুরু হয়। দুধ খাওয়ানোর পর বমি করতে থাকে। এর কিছুক্ষণ পর থেকে ডায়রিয়া শুরু হয়। সকালে তাকে হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসকেরা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে বলে ভর্তি করাতে বলেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক সাদেকুল করিম বলেন, গত এপ্রিল মাসে ঠান্ড-গরমজনিত, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া,জ্বর, সর্দি,কাশি, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৭ হাজার ৮৯০ রোগী হাসপাতালের জরুরী ও বর্হিবিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। ভর্তি হয়েছিলেন ৮২০জন। এছাড়া প্রতিদিন গড়ে ৩৫০-৪৮০ জন পর্যন্ত রোগী জরুরী ও বর্হিবিভাগ থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক ও শিশু বিশেষজ্ঞ মো.আরমান বিন আবদুল্লাহ বলেন, ঋতু পরিবর্তনের কারণে ঠান্ডা-গরমে পচা-বাসি খাবার খাওয়াসহ কয়েকটি ভাইরাসের কারণে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শিশু ও বৃদ্ধ ব্যক্তিরা ডায়রিয়া-নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এর মধ্যে প্রায় ৬৫ শতাংশ শিশুকে সুস্থ করতে হাসপাতালে ভর্তি করে টিকা দিতে হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা উৎপল দাশ বলেন, ঋতু পরিবর্তন ও ঠান্ডা-গরম, পচা-বাসি খাবার গ্রহণসহ দূষিত পানি পানে হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত রোগ, জ্বর,সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, পেটব্যাথা, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। হাসপাতালে শয্যার চেয়ে প্রতিদিন অনেক বেশি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। সংকটেরও মধ্যে চিকিৎসকসহ নার্সরা রোগীদের সেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!