দৈনিক ফেনীর সময়

লাগামহীন দ্রব্যমূল্য এবং দুর্নীতিপরায়ণ ভোগবাদী নেতৃত্ব একসূত্রে গাঁথা

লাগামহীন দ্রব্যমূল্য এবং দুর্নীতিপরায়ণ ভোগবাদী নেতৃত্ব একসূত্রে গাঁথা

উপ-সম্পাদকীয়

জাহাঙ্গীর আলম :

ক্রমবর্ধমান দুর্নীতি, ভোগ্যবস্তুর মূল্যবৃদ্ধি ও ভোগবাদী নেতৃত্ব একসূত্রে গাঁথা। যেখানে ভোগবাদী নেতৃত্ব সক্রিয় থাকে সেখানে ক্রমশ দুর্নীতি বৃদ্ধি পেতে থাকে। ভোগবাদীচিন্তা ও মানসিকতা থেকে অনিয়ম – দুর্নীতির জন্ম হয়। অনিয়ম ও দুর্নীতি এই শব্দ দু’টিকে শুনতে দু’রকম মনে হলেও এদের মাঝে ব্যাপক সামঞ্জস্যতা রয়েছে। সকল অনিয়ম দুর্নীতিকে উৎসাহিত করে। নীরবে চলতে থাকা অনিয়ম ক্রমান্বয়ে দুর্নীতির মহিরূহ রূপে আত্মপ্রকাশ করে, ডালপালা গজায়। ধীরেধীরে সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল স্তরে সঙ্গোপনে শেকড় বিস্তার করতে থাকে। একসময় দুর্নীতি নামক বিষবৃক্ষের ছায়ায় আচ্ছাদিত হয়ে পড়ে গোটা দেশ। তখন কেঁচো খুঁড়তে অজগর বের হয়ে আসে। সব জায়গায় দুর্নীতির নীরব অথবা সরব গর্জন-হুংকার শুনতে পাওয়া যায়। এসময় দুর্নীতি মূলোৎপাটনের শপথ নিয়েও তা সম্ভব হয়ে উঠে না। কারণ, তখন কম্বলের লোম বাছতে বাছতে কম্বল উজাড় হয়ে যাওয়ার অবস্থা হয়। এ অবস্থা একদিনে সৃষ্টি হয় না। দীর্ঘ দিনের দায়িত্বহীনতা, দায়িত্বশীলদের উদাসীনতা, রাষ্ট্রের দেউলিয়াত্ব, সরকারে থাকা ব্যক্তি-মহলের আত্মপূজা, স্বজনপ্রীতি, দলীয়করণসহ নানাবিধ কারণ রাষ্ট্রীয় সমাজে দুর্নীতির বীজবপন করে না শুধু সময়ে সময়ে পরিচর্যাও করে। এসবের পেছনে অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করে ভোগবাদী মনোভাব। পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণী বেঁচে থাকার প্রয়োজনে খাদ্য গ্রহণ করে। এটি প্রাণিজগতের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু প্রাণিজগতের শ্রেষ্ঠ জীব মানব সমাজে এর ব্যতিক্রম সদাসর্বদা পরিলক্ষিত হয়। মানুষের মাঝে একশ্রেণির মানুষ রয়েছে যারা শুধু বাঁচার তাগিদে খেয়ে পরে তৃপ্ত হয় না, যেকোনো উপায়ে সম্পদের পাহাড় গড়তে অদম্য সাধনায় তারা লিপ্ত থাকে। জীবনব্যাপী এই অদম্য চাহিদা মানুষের মনোবৃত্তিকে রাক্ষুসে করে তোলে। তাদের দেখতে শুনতে মানুষের আকৃতি হলেও ভেতরে ভেতরে এরা অতিকায় দানবে রূপান্তরিত হয়। এর মুূলে রয়েছে ভোগবাদী মনোভাব। ভোগবাদী মানসিকতা সম্পন্ন মানুষ গুলো শুধু বাঁচার জন্য খায় না ,বরং খাওয়ার জন্যই বেঁচে থাকে। সম্পদের প্রতি অতিমাত্রায় লোভাতুর হয়ে যায়। যে কোন উপায়ে সম্পদ অর্জন করতে অনৈতিক পন্থা অনুসরণ করে। ভোগবাদী মানুষ যতো সম্পদশালী হোক না কেন, কিছুতেই তারা তৃপ্ত হতে পারে না। আরো চাই, আরো পাই, আরো খাই এমন অদম্য লোভ তাদের তাড়া করে। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে তারা অমানবিক হয়ে যায়। ভোগের তাড়না থেকে ভোগবাদী শ্রেণি- গোষ্ঠী সাধারণ মানুষের অধিকার কেড়ে নেয়। তাবৎ মেহনতি জনতার অধিকারে অযাচিত ভাবে তারা হস্তক্ষেপ করে। গণমানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে ভোগবাদীদের বিকৃত লোলুপতা। নগররাষ্ট্রের সর্বত্র বিস্তার লাভ করে তাদের তৈরিকৃত ও নিয়ন্ত্রিত সিন্ডিকেট। এদের কারসাজিতে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। নিজেদের স্বার্থে দেশের বাণিজ্যিক খাতকে এরা নিয়ন্ত্রণ করে। ব্যবসার নামে ভোগবাদী কালোবাজারিরা বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেয়। তখন স্বল্প আয়ের সাধারণ মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠে যায়। কোন ভাবেই প্রাত্যহিক বাজার মূল্যের জোগান দেওয়া সম্ভব হয়ে উঠে না। বিশেষ করে দিনমজুর, নিম্নবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির জনগোষ্ঠী নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির ঊর্ধ্বমুখি মূল্যবৃদ্ধির কারণে চরম হিমশিম খেতে হয় যা ভাষায় অবর্ণনীয় । কারণ, তাদের আয় সীমিত, ব্যয় বিস্তর। সীমিত আয়ের মাধ্যমে পরিবারের সার্বিক ব্যয়ভার বহন করার পাশাপাশি পরিবার প্রধানকে ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার ব্যায়বহুল খরচের ভারও বহন করতে হয়। রোগ-শোক এবং দারিদ্র্যতার যাঁতাকলে নিষ্পেষিত হয়ে মানুষ এখন চরম দিশেহারা। সাধারণ মানুষের এই দুঃখ- দুর্দশা কাছ থেকে গভীর চিত্তে দেখার যেন কেউ নেই। কেবল দেবালয়ে বসবাস করে, দেবতার আসনে বসে সাধারণের দুঃখ আর কতোইবা বুঝা যায়। তাদের তো আর খাওয়া পরার অভাব হয় না। তাই কখনো কখনো সর্বোচ্চ মহল থেকে বলতে শুনা যায়, “মানুষ এখন তিন বেলার পরিবর্তে চার বেলা ভাত খায়, মোটা চালের পরিবর্তে সরুচালের ভাত খায়, ভাতের পরিবর্তে দামী পোলাও বিরিয়ানি খায়।” দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সমর্থনে বলতে শুনা যায়, ”মানুষ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে হতাশ নয়,সহনশীল।” এজাতীয় কথাবার্তা গণমানুষের সাথে নির্মম রসিকতা। কথাগুলো শুনে মনে হয়, চরম বেদনায় আহত হয়ে বিলাপরত মানুষের মুখে দাঁত দেখে দূর থেকে কেউ পরিহাস করে বলছে, “দেখো ওরা কান্না করছে না, ওরা আনন্দে হাসছে।”

নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যবস্তুর মূল্য রাতারাতি লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েই চলছে। তৈল, চাল, ডাল, আদা, রসুন, মসলা আইটেমসহ যাবতীয় পণ্যের আকাশ ছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি করে ক্রয়ক্ষমতার বাইরে নিয়ে এসেছে তথা কথিত মধ্যস্বত্ব ভোগিরা। উচ্চমহলে দ্রব্যমূল্য নিয়ে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট থেকে শিক্ষা নিয়ে সবক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধির মহোৎসব চলছে।
প্রান্তিক কৃষকের কাছ থেকে সামান্য মূল্যে তাদের উৎপাদিত কৃষিজ ফসল ক্রয় করে অধিক মূল্যের বিনিময়ে বাজারে ছাড়ে ভোগবাদী অসৎ ব্যবসায়িরা।এরা চরম লোভী। লোভের তাড়নায় প্রলুব্ধ হয়ে মানুষের জীবীকার উপর এরা হস্তক্ষেপ করছে। জিম্মি করে অর্থ আত্মসাৎ করছে। তারা জানে যে, মানুষ বাঁচতে হলে খেতে হবে। না খেয়ে যাবে কোথায়? নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যতো টাকাই হোক মানুষ তা যে কোন উপায়ে ক্রয় করবেই। অপরদিকে মুনাফাখোর অসৎ ব্যবসায়িরা খাদ্যে ভেজাল মেশানোর মতো ভয়াবহ অপরাধ সাধন করে আসছে। মানুষের খাদ্যে ফরমালিন মিশিয়ে খাদ্যকে বিষিয়ে তুলেছে। পচনশীল খাদ্যদ্রব্য দীর্ঘ সময় মজুত করে রেখে মুনাফা লুফে নিতে খাদ্যে বিষক্রিয়া মিশিয়ে থাকে ভোগবাদী ব্যবসায়িরা। তাদের এই জঘন্য অপরাধ পুরো মনবতার জন্য হুমকি। ফরমালিন যুক্ত খাবার খেয়ে বড়দের পাশাপাশি শিশুরা মারাত্মক রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছে। মানবদেহ থেকে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। মাতৃগর্ভে জন্ম নেওয়া ভ্রূণটিও ভেজাল মিশ্রিত খাদ্যের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে, অসুস্থ হয়ে পৃথিবীতে আসছে। একটি শিশু সুস্থশরীর, সুস্থদেহ- মন নিয়ে জন্মাতে না পারা জাতির জন্য শুধু হুমকি নয়, অভিশাপ। আজকের শিশুরা আগামীর ভবিষ্যৎ। জাতির আগামীর ভবিষ্যতকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে দুর্বল করে দিচ্ছে অসৎ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। তারা নিজেদের স্বার্থে গোটা জাতির সাথে প্রতারণা করছে। জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী আচরণ করছে। ব্যবসার নামে রাষ্ট্রের সাথে দুর্নীতি করছে। বিভিন্ন ভাবে রাষ্ট্রের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে নিজেদের ফাঁফিয়ে ফুলিয়ে মোটাতাজা করছে। এত ভয়ানক অপরাধ চলমান রেখেও তারা যেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তারা যেন সকল দোষের ঊর্ধ্বে। এদের প্রভাব- প্রতিপত্তি রাষ্ট্রীয় শক্তির নিগড়ে বাঁধা।

তারা নিজেরা এক একজন প্রবল ক্ষমতাধর এবং সরকারের অংশীভূত। এসব ভোগবাদী ব্যাবসায়িরা অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে ক্ষমতার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। তাই সুযোগ বুঝে রাজনৈতিকদলে প্রবেশ করে এবং মোটাঅঙ্কের অর্থ দিয়ে কেউকেউ নোমিনেশন ক্রয় করে নিয়ে এমপি হয়, মন্ত্রিত্ব লাভ করে। তারা ব্যবসায়ী বলে কথা। ব্যবসায়িদের টাকার অভাব নেই। তাই রাজনৈতিকদলে ব্যবসায়িদের বিশেষ গুরুত্ব ও চাহিদা রয়েছে। কারণ তাদের কাছে হাত বাড়ালে অঢেল টাকা পাওয়া যায়।এরা শুধু নিজের জন্য টাকা ব্যয় করে না, দলীয় প্রধানের মনোরঞ্জনে দলীয় ফাণ্ডে বিপুল অর্থের জোগান দিয়ে থাকে। তাই দলীয় নীতিনির্ধারণী কমিটিতে সবসময় এদের বিশেষ অবস্থান থাকে। এদিক থেকে তারা একসময় সরকারের প্রতিভূ হয়ে উঠে। তখন রাজনীতি আর নীতির জায়গায় থাকতে পারে না। রাজনীতি চলে যায় অসৎ ব্যবসায়ি সিন্ডিকেটের দখলে। তারা সবার আগে নিজেদের ব্যবসায়িক সুবিধা দেখে। সুযোগ পেলে সরকারকেও টেপে ফেলতে তারা দ্বিধাবোধ করে না। যারা অতিমাত্রায় মুনাফা লোভী তাদের কাছে মানুষের হাহাকারের কোন মূল্য নেই। সুকৌশলে জনদুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়ে মানুষের পকেট হাতিয়ে নেওয়ার মিশন নিয়ে এরা সিন্ডিকেট গড়ে তুলে। দুঃখের বিষয় হলো, এই সিন্ডিকেটের কবলে যখন জিম্মি হয়ে যায় দেশ, রাষ্ট্র তখন সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়। জাতীয় জীবনে রাজনীতির গুরুত্ব অপরিসীম। রাজনীতির অনুশাসনে দেশ পরিচালিত হয়। তাই রাজনীতি থাকতে হবে দুর্নীতি ও দুর্বৃত্ততায়ণ মুক্ত। রাজনীতিকে দুর্নীতির ধরাছোঁয়ার বাইরে রাখতে হলে দুর্নীতিপরায়ণ ও ভোগবাদিদের হাতে রাজনীতির চাবিকাঠি তুলে দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের প্রধান ব্যক্তিকে এই গুরুদায়িত্ব নিতেই হবে। দুর্নীতিবাজ, অসৎ ব্যক্তির হাতে নেতৃত্বের দায়িত্ব তুলে দেওয়া যাবে না। ভোগবাদী মানসিকতা সম্পন্ন ব্যক্তির উপর নেতৃত্ব ছেড়ে দিলে জাতির জীবনে দুর্ভোগের অমানিশা নেমে আসে। নেতৃত্বের কোয়ালিটিহীন ব্যক্তি জনপ্রতিনিধি হওয়া দেশ জাতির জন্য অভিশাপ। তাই দেশের সর্বোচ্চ আদালতে এবিষয়ে আইন প্রণয়ন করা একান্ত অপরিহার্য। এর ব্যতিক্রম হলে দলীয় প্রধান এবং রাজনৈতিকদলকে জবাব দিহিতা ও শাস্তির মুখোমুখি আনতে হবে। তবে এমন আইন জাতীয়সংসদে পাশ হওয়ার প্রত্যাশা করা দিবা স্বপ্নের শামিল। কারণ, জাতীয় নেতৃত্ব ভোগবাদের দখলদারিত্বে নিমজ্জিত হয়ে গেছে।ভোগবাদী নেতৃত্ব নিজেদের স্বার্থের পরিপন্থী কোন আইন প্রণয়ন হতে দেবে না। উপরন্তু তাদের স্বার্থে আঘাত লাগে এমন আইন থেকে থাকলেও তা বাস্তবায়নে বাঁধার প্রাচীর তৈরি করবে এটাই স্বাভাবিক। যারা স্বার্থের পূজারি তারা কখনো সঠিক নেতৃত্ব উপহার দিতে পারে না। কারণ,এরা জনসেবার নাম করে নিজেদের সেবায় মত্ত থাকে। আত্মমগ্ন ব্যক্তিরা প্রকৃত নেতা হতে পারে না। নেতৃত্বের পূর্বশর্ত হলো, আত্মত্যাগী, মুক্তমনা ও উদারচিত্তের অধিকারী হওয়া। “সেবার জন্য নেতৃত্ব, নেতৃত্বের জন্য সেবা নয়” এ কথাটি শাশ্বত এবং সত্য। সুতরাং জাতীয় নেতৃত্বে আসতে হলে জাতীয় সেবক হয়ে আসতে হবে। আমাদের দেশকে এগিয়ে নিতে হলে সর্বাগ্রে যা করা প্রয়োজন, তা হলো যোগ্যনেতা নির্বাচন করা। সুনাগরিক, দেশপ্রেমিক, সেবাপরায়ণ নেতৃত্ব দেশকে কাঙ্খিত লক্ষ্যে এগিয়ে নিতে পারে। দেশের ভাগ্যে অর্থনৈতিক পরিবর্তন এনে দিতে পারে। দারিদ্র্যকে দেশ থেকে চিরতরে নির্বাসনে পাঠাতে পারে সৎ, দক্ষ, সেবাপরায়ণ নেতৃত্ব।

অন্যদিকে দুর্নীতিপরায়ণ, ভোগবাদী নেতৃত্ব জাতির ভাগ্যেকে অমানিশার তিমিরে আচ্ছাদিত করে দেয়। দেশের টাকা অবৈধ পন্থায় বিদেশে পাচার করে, ব্যাংক ডাকাতি-লুটপাট, ঝণ জালিয়াতি করে অর্থনৈতিকভাবে দেশের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে। নিষিদ্ধ কালোবাজারি, চোরাকারবারের সাথেও দুর্নীতিপরায়ণ ভোগবাদী নেতৃত্বের প্রত্যক্ষ সম্পর্ক থাকে। এদের যোগসাজশেই সোনা চোরাচালান, নেশার উপকরণ হেরোইন, ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ নানাবিধ মাদকদ্রব্য দেশে ওপেন-সিক্রেট স্টাইলে চলতে থাকে।
দেশের ক্ষতি সাধন করে যাওয়াই এদের কাজ। এদের কাছে দেশপ্রেম বলতে কিছুই নেই। দেশের মানুষের প্রতি কোন দায়বদ্ধতা তাদের থাকে না। এরা দেশের তরুণ যুবসম্প্রদায়কে বিভিন্ন ভাবে অপরাধ জগতের সাথে মিশিয়ে দিয়ে একদিকে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে। অপরদিকে সম্ভবনাময় তারুণ্যকে পথভ্রষ্ট করে ছাড়ে। আমাদের দুর্ভাগ্য, জাতি হিসেবে ঘুরে-ফিরে আমরা এমনই নেতৃত্বের যাঁতাকলে নিষ্পেষিত হচ্ছি। সময়ের পরিক্রমায় বাইরের লেবেল পরিবর্তন হলেও ভেতরের অবস্থা অপরিবর্তনীয় রয়ে যায়। জাতির ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়না। নেতার পরিবর্তন হলেও নেতৃত্বে পরিবর্তন আসে না। শাসকের পরিবর্তন হলেও শাসনে পরিবর্তন হয় না। আমরা যেন বারংবার তপ্ত কড়াইয়ের যাতনা থেকে মুক্তি লাভের আশায় জ্বলন্ত উনুনে ঝাঁপ দিচ্ছি। সে আগুনে ভস্মীভূত হয়ে জীবন-মৃত্যর সন্ধিক্ষণে এসেও স্বপ্ন বুনছে গোটা জাতি। কখন পাবে তাদের প্রত্যাশিত নেতৃত্ব? কখন আসবে জাতীয় জীবনে প্রত্যাশিত সুশাসন? ক্ষুধা ও দারিদ্র্যতা থেকে মুক্তি পেতে আর কতো যুগ অপেক্ষায় থাকতে হবে জাতিকে। হাজার নিরাশার মাঝেও স্বপ্ন দেখেছে জাতি, জাতীয় জীবনের এই অচল অবস্থার অবসান হবে। জাতির ভাগ্যের সাথে তামাশার খেলা শেষ হবে। ভোগবাদী-দুর্নীতিপরায়ণ নেতৃত্বের পতন হবেই হবে। দুঃখের সকল গ্লানি, বেদনা ও হতাশার নিকষ আঁধারকে পদদলিত করে আবারও বিজয় লাভ করবে আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, কবি ও প্রাবন্ধিক।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!