দৈনিক ফেনীর সময়

সাহিত্য সময় ২২ মে ২০২২

সাহিত্য সময় ২২ মে ২০২২

মাশরুরা লাকী
পুষ্প কিশোরীর স্বরলিপি

সংসারের আরেক নাম জটিল বাক্স
অথবা পুষ্প কিশোরীর স্বরলিপি।
চৈত্রের খরায় টিসিবির ভীড় ঠেলে ঠেলে
লাইনে দাঁড়িয়ে আছে বৃদ্ধ বাবা
পা দু’খানি অবশ ব্যথায় টনটন করছে
চোখ ঝাপসা হয়ে এলে দু’ফোটা আইড্রপ নিলেন
ইফতারের আগে ছোট্ট শিশুটি তরমুজে খোঁজে ফ্রিজের শীতলতা।
কাল এগারোই এপ্রিল,
গায়ে জড়িয়ে নেব সুপার পিংক মুন।
কতবার ভেবেছি,
রসিক প্রেমিক পেলে আরেকবার না হয় প্রেম করবো।
আশ্চর্য, এখন সবকিছু ছাপিয়ে
সমাজ রাষ্ট্র আর মধ্যবিত্তকে
নিয়ে করি উপাসনা।
আমার আনন্দ, উপাসনার একমাত্র খাদ্য।

সুষমা নার্গিস স্বপ্না
নস্টালজিক

সময়ের গুঁড়োগুলো টেলকম পাউডারের মত
শরীরে মনে-মননে মেখে
উপলদ্ধি করছিলাম মসৃণতা,
অবিন্যস্ত কেশের বারিধারায়
অভিভূত আমি খুঁজি পরম্পরার সুবাস,
কাহিনী শুকোতে দিলাম শতরঞ্জি পেতে
মধ্য দুপুরে জীবনের উঠোনে,
এক পরিচ্ছদ, দুই পরিচ্ছদ
পেরোতে পেরোতে ঠিক পৌঁছে গেলাম
কৈশোরের বারান্দায়,
যেখান থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিলো শৈশবের জানালা,
পুতুল খেলার দুপুর,
ক্ষণিকের আড়ি দেয়া সখির মলিন মুখ,
বকুল কুড়োতে যাবার তাড়া শেফালীদের পুকুরে
জলোচ্ছ্বাস তুলে জলোকেলি, মায়েদের বকুনী,
সব কিছু ভুলে গিয়ে,
বুড়ো আঙ্গুলে আঙ্গুল ঘঁষে ভাব করি বারবার,
জীবনের বালুঝড়ে আবছা হয়ে আসে
ফেলে আসা সুরোম্য মরুদ্যান।

ফিরোজ আলম
সুখ দুঃখের পাঁচালি

ভালবাসার দিনগুলো
আকাশে বিজলী চমকানোর মত
হঠাৎই নাই হয়ে যায়।
তোমাকে ভালবাসার মুহূর্ত
সেকেন্ড মিনিটি ঘন্টা দিন সপ্তাহ বছর …
জীবন থেকে এত দ্রুতই চলে গেল টেরই পেলাম না।
সময় প্রবাহমান, কারো জন্য অপেক্ষা করে না
এখন তুমি নেই
দিবস রজনী কত প্রলম্বিত
ভালবাসা,
সুখের দিন আলাপে সালাপে
শিস দেওয়া পাখির মত নিমিশেষই চলে যায়,
বিরহ দুঃখের দিন কাটতে চায় না।

ম পানা উল্যাহ্
অরিন্দমের খেত-খামার

দিন রাতের প্রভেদ অরিন্দমকে ভাবায়না
অরিন্দম জানে শুধু ফসলের সুখদুখ
আবহাওয়ার ঘেরাটোপে ডুবে যায় সে
ভেংচি কাটে তাকে ফসলের মুখ,
সকালের মেজাজ বুঝে উঠবার আগে বিকেলটা বিষন্ন
উপরন্তবালাই দমনের উটকো ঝামেলা
কৃষি কর্তার সতর্ক পাঠ তাকে খুব ভাবায়
তবু নবান্নের হাসি ধরে রাখে মুখে।
অষ্টমুখে স্থিতসুখে তিন বেলার খাবার যোগান
অরিন্দমের রুটিন ওয়ার্কমাত্র
বৌয়ের বছর বছর বিয়ান্তি তার কাছে
চাষবাসের মতই মনে হয়,
রাতের নিউজে উৎকন্ঠা দেখে সবার চোখেমুখে
নির্বিকার চিত্তে দেখে যায় সব-খুব একটা রা করেনা
রাষ্টেধর কর্ণধার কখন বদলায, কখন আসে, কখন যায়
সেসব তার কাছে হেঁয়ালি গল্পের পুরনো কাসুন্দি
সে জানে শুধুবীজবোপন, জমিতে চাষ দেয়া, ফসলকাটা
পরিবার সজনের কাছে সে কেবল উৎপাদন যন্ত্রবিশেষ!

মোহাম্মদ সফিউল হক এর দু’টি কবিতা

শ্বাপদের শ্বাস হবো

মৃত্যুকে ললাটের উঠোন হতে
অদৃষ্টের অভিশাপ হতে
প্রছন্ন অহংবোধে
হাতের মুঠোয় নেবো!
এই আমোদ প্রমোদে
জীবন আর প্রহ্লাদে
ফুরোলো জীবনপ্রদায়ী অক্সিজেন
সভ্যতার সুদীর্ঘ শিকড়ে।
আনাচারের কিউমুলেটিভ কার্বনে
সময়ের সুদীর্ঘ বন্ধনে
ভারী আকাশ, এই চরাচর।
আর নয় –
ফুল-পাখি,কবিতা-গান
রাষ্ট্রের সতীত্ব যখন ক্রন্দসী,
সমাজের বিবেক যখন অনুভূতিহীন , মৃত
ঘুণে ধরা প্রণয় মশালে
তখন শ্বাপদের শ্বাস হবো।

পাখিটি প্রেম বুঝলো না

পাখিটি উড়ে গেল ফুড়ুৎ করে;
রেখে গেলো বুকের মাঝে অব্যক্ত ব্যথা…।
পাখির জন্য রেখেছিলাম বুকের বামপাশটা।
সেখানে বানালাম শীতল দীঘি,
ফোটালাম লাল শাপলা,
রাখলো না সে তার মায়াবী ঠোঁট।
অথচ পাখি আমাকে দিয়ে স্বপ্ন বোনায় আমার পৃথিবীতে;
বিভোর হয়ে ছুঁতে চাই তার ডানা।
ডানায় যে সুখ লেপ্টে ছিল,
আসলে সে সুখ নয়…।
তবু বিশ্বাসের বুক ছুঁয়ে গোপন দরজা খুলে
বসে আছি কাঁচরঙা প্রেম নিয়ে…।
পাখিটি প্রেম বুঝলো না, সন্দেহ বুঝলো!

গোলাম আযম
ওসিফা হাসান তৃষা

বাবা মায়ের কোলজুরে যেই
এলো তৃষামণি,
সবার হৃদে উঠলো বেজে
আনন্দেরই ধ্বনি।
মুচকি হাসির ঠোঁটটি দেখে
হাসে সবার দিল,
পাড়া পড়শি সবাই হাসে
আনন্দে খিলখিল।
ফুল কলিরা গুঞ্জরণে
তুলে দারুণ সুর,
এক নিমিষেই প্রসব জ্বালা
হয় যে মায়ের দূর।
নামটি রাখে বাবা যে তার
ওসিফা হাসান তৃষা,
সকলের নয়মমনণি
পায় যে ভালোবাসা।
পরম যত্নে উঠে বেড়ে
ফুল কলিদের মত,
মিষ্টি মুখের হাসি দেখে
দুর হয়ে যায় ক্ষত!
খুনসুটি আর দুষ্টমিতে
কাটে যে তার বেলা,
দাদা দাদীর সাথে করে
হরেক রকম খেলা।
জায়নামাজে দাড়িয়ে মায়ে
ফেলে চোখের পানি,
অনেক বড় হয় যেন সে
তার যে নয়নমণি।

অপু চৌধুরী
এ নিয়মে চলো যদি

আড়মোড়া দিয়ে গায়ে আলসে টুটে
শয্যাটা ছাড়ো, যখন সূর্য উঠে।
হাত-মুখ ধুয়ে নিও ভালো জল নিয়ে
প্রার্থনা করো পরে মন-প্রাণ দিয়ে।
শারীরিক কসরতও খুব প্রয়োজন
বাড়ায় তা ধ্যান-জ্ঞান যোজন যোজন।
পুষ্টিতে ভরপুর উদ্ভিজ দ্বারা
খেয়ে নিও পারো যদি মেদ-আমিষ ছাড়া।
মনোযোগ দিতে হবে অবশ্যই পাঠে
বড়দের উপদেশ মননে সাঁটে।
শিখে নিও ধীরে ধীরে পানিতে সাঁতার
ভার তুলে দেখে নিও শকতি মাথার।
নিয়মের ছক মেনে খেলে নিও খেলা
ঘরে ফেরা হয় যেনো অনধিক বেলা।
সঠিক সময় বোঝে সু শয্যায় যেও
তার আগে জল পান-রাত ভোজ খেও।
গড়ে নিও সু অভ্যাস বই পঠনের
সহায়তা পাবে তাতে মেধা গঠনের
এ নিয়মে চলো যদি তুমি প্রতিদিন
থাকবে না ব্যর্থতা, চলা গতিহীন।

বি প্র তী প অ পু
বিকিকিনি

কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়ায় অমন
শীতল করা জলের ধারা
কোন ফাগুনে তোর কাননে
ঝরে এমন ফল্গুধারা
একলা ভাবিস কার কথা তুই
হরেক রকম ভান ভণিতায়
মুখপুড়ি তোর নাকের নোলক
কোন বাজারে সুলভ বিকায়!
সস্তা রাতে আস্ত হাতে
চেপে ধরিস বুকের মাঝে
নিশি ডাকের গহন তালে
রাগ ভৈরবী বেহাগ বাজে।

সৌরভ দুর্জয়
স্বাধীনতা আমার অহংকার

স্বাধীনতা ;স্বাধীনতা ;আমার অহংকার
স্বাধীন দেশের মানুষ হয়ে দিচ্ছিরে হুংকার।
কেউ করে না শাসন এখন স্বাধীন ভাবে চলি,
স্বাধীন মুখে মায়ের ভাষা খুশির সাথে বলি।
লাল সবুজের নিশান হাতে ঘুরি বিশ্বময়,
আমরা এখন স্বাধীন জাতি নেইকো বুকে ভয়।
আছো যারা দেশের শত্রু ধরে ছদ্মবেশ,
মনে রেখো রক্তে কেনা সোনার বাংলাদেশ।
সেই না দেশের করলে ক্ষতি রক্ষা কারো নাই,
ভাসায় দেবো সাগর জলে বানায় চুলোর ছাই।
অর্থ পাচার বা অনাচার করছো যারা দেশে,
ভুলে গিয়ে এসব কারবার চলো ভদ্র বেশে।
সবাই মিলে গড়ি দেশ ভুলে অনাচার,
দেশের জন্য কাজটা করি যার যা দরকার।

তৌহিদ আহমেদ
দরিয়া বকুল

সাহসী অনার্য কন্যা একা দেয় দরিয়ায় পাড়ি
আঁচলে সোনার মুদ্রা কবি তবু পথের ভিকারি।
খনার বচন শুনি ঠোঁটে তার নিসর্গের ভাষা
জলের লক্ষণ দেখে বুঝে নেয় বৃক্ষের পিপাসা।
অগ্নির ভিতর থেকে উঠে আসে অগ্নির ডাহুক
রোদের জানালা খুলে প্রভাতের পাথরের বুক।
দুচোখে ফুলের হাসি দরিয়া বকুল যার নাম
হঠাৎ বললে এসে, এতো কাল সমুদ্রে ছিলাম।
চিবুকে আলোর দীপ্তি সুরভিত স্বপ্নের কুশুম
সময় সমুদ্র শ্রোতে ভালোবাসা মেঘেদের ঘুম।
হারানো বকুলতলা মেয়েবেলা ফেলে আসা দিন
তোমার অপার খুশী নীল মেঘ দিগন্তে বিলীন।
তোমার প্রত্যাশা তবু অতলান্ত নীল দরিয়ায়
যেখানে আর্তির নদী শুক্লারাতে নক্ষত্রে হারায়।
তোমার আঁচলে বাঁধা নক্ষত্রের নীল যুবরাজ
দক্ষিণে দরিয়া সত্য সপ্তডিঙ্গা বানিজ্য জাহাজ।
পানসি ভাসাও জলে ঢেউ তোলে উত্তাল নদী
তোমার অপার যাত্রা দরিয়ার বুকে নিরবধি।
অনেক বাঁধার নদী পার হয়ে নদীর উজান
সামনে এগিয়ে যাও সময়ের সাহসী সন্তান।
রক্তাভ রোহিত তুমি ভেসে যাও অপরাহ্ন জলে
সযত্নে লিখেছো নাম মাতৃমুগ্ধ বৃক্ষের বাকলে।
সময় সমুদ্র শ্রোত ফুল তোলা রঙিন রুমাল
চাঁদের কপালে টীপ মেয়েবেলা ফুলের সকাল।
তোমার কবিতা পড়ি তুমি তার নিজেই উপমা
শ্রাবণ মেঘের কাছে ভালোবাসা করিয়াছো জমা।
তোমার কবির মন নক্ষত্রের তারার বাগান
তোমার ভূবন জুড়ে রাতজাগা পাখিদের গান।
বকুল ফুলের গন্ধে মেঘ ভাঙা দীর্ঘ কেশদাম
মাধবী এসেই বলো, এতো কাল সমুদ্রে ছিলাম।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: কন্টেন্ট সুরক্ষিত!!